৭ রকমের শিরক 

Raindrops on torii gates hang at Fushimi Inari Shrine, Kyoto.

মুসলিমদের অনেকেরই ধারণা শুধু মূর্তিপূজা করলেই শিরক করা হয়। কোন সন্দেহ নাই, মূর্তিপূজাকে কোরান পরিস্কার ভাষায় শিরক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু শিরকের আরো অনেক প্রকারের বর্ণনাও আছে কোরানে। কমপক্ষে ৭ রকরে শিরকের উলে্লখ মিলবে বিভিন্ন আয়াতে।

১.

নিজের ইগো বা অহং আর প্রবৃত্তি/কামনা-বাসনাকে সবার উপরে স্থান দেয়া

তুমি কি তাকে দেখনি যে তার কামনা-বাসনাকে (আরবী হাওয়াহু) ইলাহ রুপে গ্রহণ করে। তবু কি তুমি তাহার অভিভাবক হইবে? (২৫:৪৩)

২.

সুপারিশকারী হিসেবে মূর্তিপূজা

উহারা আল্লাহ ব্যতীত যাহার ইবাদত করে তাহা উহাদের ক্ষতিও করিতে পারেনা উপকারও করিতে পারে না। তাহারা বলে, Èউহারা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, Èতোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর খবর দিবে যাহা তিনি জানেন না। তিনি মহান, পবিত্র, তাহারা যাহাকে শরীক করে তিনি তাহা হইতে উর্ধ্বে। (১০:১৮)

৩.

মৃত সাধু-সন্ত ও নবীদের পূজা করা

উহারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাহাদেরকে আহ্বান করে তাহারা কিছুই সৃষ্টি করে না, তাহাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তাহারা নিষ্প্রাণ নীর্জিব, এবং কখন তাহাদেরকে পুনরুত্থিত করা হইবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নাই। (১৬:২০-২১)

যাহারা কুফরি করিয়াছে তাহারা কি মনে করে তাহারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করিবে। নিশ্চয়ই আমি কাফিরদের আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রাখিয়াছি জাহান্নাম। (১৮:১০২)

বল, আল্লাহ ব্যতীত যাহাদেরকে ইলাহ মনে কর তাহাদেরকে আহ্বান কর, করিলে দেখিবে তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করিবার অথবা পরিবর্তন করিবার শক্তি উহাদের নাই।

উহারা যাহাদেরকে আহ্বান করে তাহারাই তো তাহাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাহাদের মধ্যে কে তাহার কত নিকটতর হইতে পারে, তাহার দয়া প্রত্যাশা করে ও তাহার শাসি্তকে ভয় করে। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের শাসি্ত ভয়াবহ। (১৭:৫৬-৫৭)

নবীরা কখনো কোন ধরনের শিরককে প্রশ্রয় দেননি। অনুসারীদের কিতাব অধ্যয়ন করতে বলেছেন।

কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত ও নবুয়ত দান করার পর সে মানুষকে বলিবে ,Èআমার দাস হইয়া যাও, আল্লাহকে ছাড়া’, ইহা তাহার জন্য সঙ্গত নহে। বরং সে বলিবে, Èতোমরা রব্বানী হইয়া যাও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও ও যেহেতু তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর।’

ফিরিশতাগণকে ও নবীগণকে প্রতিপালকরুপে গ্রহণ করিতে সে তোমাদের নির্দেশ দিতে পারে না। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পর সে কি তোমাদের কুফরির নির্দেশ দিবে? (৩:৭৯ -৮০)

তবে মানুষতো দাবি করে যাবে তারা কোন ভুল করছে না।

Èঅবিমিশ্র আনুগত্যই কি আল্লাহর প্রাপ্য নয়? যাহারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে তাহারা বলে, Èআমরা তো ইহাদের পূজা এইজন্যই করি যে, ইহারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে আনিয়ে দিবে।’ উহারা যে বিষয়ে মতভেদ করিতেছে আল্লাহ উহর ফায়সালা করিয়া দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাহাকে সত্পথে পরিচালিত করেন না। (৩৯:৩)

এমনকি তারা যাদের শরণাগত হয়, তারাও আল্লাহর দাস এবং তাদের মতোই সৃষ্ট।

আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাহাদেরকে আহ্বান করো তাহারা তো তোমাদের মতোই বান্দা। তোমরা তাহাদেরকে আহ্বান কর, তাহারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (৭:১৯৪)

৪.

জিনদের পূজা করা

তাহারা জিনকে আল্লাহর শরিক করে, অথচ তিনিই ইহাদের সৃষ্টি করেছেন এবং উহারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত। এবং উহারা যাহা বলে তিনি তার উর্ধ্বে। (৬:১০০)

৫.

সম্পদ-সম্পত্তিকে পূজা করা

১৮ নম্বর সুরায় এর একটা উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এবং তাহার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল। অতঃপর কথাপ্রসঙ্গে সে তাহার বন্ধুকে বলিল, ধনসম্পদে আমি তোমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এবং জনবলে তোমার অপেক্ষা শক্তিশালী। (১৮:৩৪)

অবশেষে (৩৪ থেকে ৪৪ আয়াত অব্দি ঘটনাটির বিবরণ আছে) সে উপলদ্ধি করে যে, সে যা করেছে তা সম্পদ পূজা ছাড়া আর কিছু নয়।

তাহার ফল-সম্পদ বেষ্টিত হইয়া গেল বিপর্যয়ে। এবং যখন উহা মাচানসমেত ভূমিস্যাত্ হইয়া গেল তখন সে আক্ষেপ করিতে লাগিল উহাতে যাহা ব্যয় করিয়াছিল তাহার জন্য। সে বলিতে লাগিল, Èহায়! আমি যদি কাহাকেও আমার প্রতিপালকের শরীক না করতাম!’ (১৮:৪২)

এখানে পরিস্কারভাবে দেখা যাচ্ছে লোকটি তার সম্পদ ও স্ট্যাটাস নিয়ে মহাফুর্তিতে ছিল এবং ভেবেছিল এর কোন কোন ক্ষয় নাই। যিনি তাকে এই সম্পদ দিলেন তার স্মরণ না করে তার সম্পদ নিয়ে অহংকার করে একরকম সম্পদ পূজা করে বসল সে।

আর আল্লাহ ব্যতীত তাহাকে সাহায্য করিবার কেউ ছিল না। এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হইল না। এই ক্ষেত্রে কতর্ৃত্ব আল্লাহরই, যিনি সত্য। পুরষ্কার প্রদানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ। (১৮:৪৩-৪৪)

৬.

যা অবতীর্ণ হয়েছে তার বাইরে অন্য কিছুকে অঁাকড়ে ধরা

বল, Èসাক্ষীতে সর্বশ্রেষ্ঠ কী?’ বল, Èআমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহ সাক্ষী এবং এই কোরান প্রেরিত হইয়াছে যেন তোমাদেরকে এবং যাহার নিকট ইহা পেৌছিবে তাহাদিগকে এর দ্বারা আমি সতর্ক করি। তোমরা কি এই সাক্ষ্যও দাও যে, আল্লাহর সঙ্গ অন্য ইলাহও আছে?’, বল, Èআমি সে সাক্ষ্য দেই না।’ বল, Èতিনি তো এক ইলাহ এবং তোমরা যা শরীক কর তাহা হইতে আমি অবশ্যই নির্লপ্তি।’ (৬:১৯)

তোমাদের কী হইয়াছে? তোমরা এ কেমন সদ্ধিান্ত দিতেছ? তোমাদের কাছে কি এমন বই আছে যা তোমরা অধ্যয়ন কর। আর তোমাদের জন্য উহাতে আছে যা তোমরা পসন্দ কর। (৬৮:৩৬-৩৮)

৭.

ধর্মীয় নেতা, পন্ডিত ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে পূজা করা

তাহারা আল্লাহর পাশাপাশি তাহাদের রাব্বি, সাধু-সন্ত এবং অন্যান্য প্রভুদের উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ উহারা এক আল্লাহরই এবাদত করার জন্য আদষ্টি হইয়াছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। তাহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে তিনি কত পবিত্র। (৯:৩১)

দুঃখজনকভাবে আমাদের অনেকেই কেবলমাত্র মূর্তিপূজাকে শিরক বলে ধরে নিয়েছি। অথচ আরো অনেকভাবেই যে শিরক করা হয়ে থাকে সে কথা কোরানেই পরিস্কার করে বলা আছে।

Scroll to Top