কোন সহিংসতার কারণে কেউ মারা গেলে অনেকেই এ কথাটা বলে থাকেন- কোরআনে বিনা কারণে কাউকে হত্যা করার অপরাধকে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার সমতুল্য অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় সহিংসতার অভিযোগ উঠলে মুসলিম ওলামারা বেশ জোরেশোরেই বলেন এ কথা। কথা সত্য। বিনা অপরাধে হত্যা এবং দেশে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টির শাস্তি হিসেবেই কেবল মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে কোরআনে (যা কার্যকর করবে রাষ্ট্র)। কিন্তু হাদিসে বা নবীজীর (সা.) জীবনীতে কিছু বর্ণনা আমরা পড়ি যার ছবিটা এমন সরল নয়। নবীজীবনীতে ও হাদিসের বইগুলোতে এমন হাদিস রয়েছে যেখানে নবীকে সামান্য কারণে উত্তেজিত, প্রতিশোধপরায়ণ আরব নেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। পয়লা নবীর জীবনী থেকে নমুনা দেয়া যাক।
এক.
ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা) বইয়ের বর্ণনা। (দেখুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদে সীরাতে রাসুলুল্লাহ (সা) বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের ৪৪৪ পৃষ্ঠা অথবা আলফ্রেড গিয়ামের লাইফ অফ মোহাম্মদের পৃষ্ঠা ৫১৫.)
খায়বার যুদ্ধের বাকী ঘটনা শিরোনামের কাহিনীটি এরকম:
“ বানু আল-নাদিরের সঞ্চিত ধনরত্নের হেফাজত ছিল কিনানা ইবনে আল-রাবির উপর। তাকে রাসুলের (সা) কাছে আনা হলে সে তা অস্বীকার করল, সে ওগুলো কোথায় আছে জানেনা। একজন ইহুদী রাসুলের (সা) কাছে এসে (তাবারি: তাকে আনা হয়েছিল) জানাল সে কিনানাকে ধ্বংসাবশেষের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রোজ সকালে যেতে দেখেছে। রাসুল (সা) কিনানাকে বললেন, ‘আমরা যদি প্রমাণ পাই তোমার কাছে সব ধনসম্পদ আছে তাহলে তোমাকে হত্যা করা হবে সেটা তুমি জানো?’
সে বলল, সে তা জানে।
রাসুল (সা) হুকুম দিলেন ধ্বংসাবশেষ খোদাই করে ধনরত্ন পেতে হবে। কিছু সম্পদ পাওয়া গেল। বাকী ধনরত্ন কোথায় তাকে রাসুল (সা) জিজ্ঞেস করলে সে তা বলতে অস্বীকার করল। রাসুল (সা) ও জুবায়ের ইবনে আওয়ামকে হুকুম দিলেন, ‘ওর কাছে যা আছে বের করে না দেওয়া পর্যন্ত এর উপর অত্যাচার চালাও।’
জুবায়র তার বুকের উপর চকমকি পাথর আর ইস্পাত রেখে তার উপর অগ্নিসংযোগ করলেন। এই অবস্থায় তার শেষ দশা উপস্থিত হলো। তারপর রাসুল (সা) তাকে মুহম্মদ ইবনে মাসলামার হাতে তুলে দিলেন। মুহম্মদ তার মস্তক কর্তিত করে ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিল।”
দুই.
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদে সীরাতে রাসুলুল্লাহ (সা) বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের ৬৮৬ পৃষ্ঠা, গিয়ামের ৬৭৫ পৃষ্ঠার বিবরণ:
“ আবু আফাক ছিল বানু উবায়দা গোত্রের বানু আমর ইবনে আউফ বংশের লোক। আল হারিছ ইবনে সুবায়দ ইবনে সামিতকে রাসুল (সা) হত্যা করলে পরে ধর্মত্যাগের লক্ষন তার মধ্যে প্রকাশিত হয়। সে বলে:
অনেক দেখেছি জীবনে, কিন্তু মানুষের/এমন জমায়েত দেখিনি কখনো/কর্মের ও মিত্রের কাছে এমন কৃত সংকল্প/আহ্বান করলে, কায়লার* সন্তানদের চেয়েও/ উত্তম তারা একত্র হলে/ এইসব মানুষ পাহাড় টলায়, মাথা নত করে না।/এক সওয়ারি এসে ওদের দুটি ভাগ করল,/বলল, ‘হালাল’ ‘হারাম’ ইত্যাদি সব।/ গৌরব কি রাজত্বের বিশ্বাস করো যদি/তাহলে তুব্বা অনুসরণ করো।**
(* কায়লা হল আউস ও খাজরাজের অনুমিত পূর্ব পুরুষ। ** অর্থাত্ তুব্বা প্রকৃত রাজা ছিল, তবু তাকে তোমরা বাধা দিয়েছ। তাহলে মুহাম্মদ (সা) কে মানবে কিসের জন্য।)
(এই কবিতা শোনার পর) রাসুল বললেন, ‘আমার হয়ে কে শায়েস্তা করবে এই বদ লোককে?’ বানু আমর ইবনে আউফের ভাই, সালিম ইবনে উমায়র গিয়ে তাকে খতম করল। এই প্রসঙ্গে ইবনে মুজায়রিয়া বলেন:
মিথ্যা আরোপ করেছ তুমি আল্লাহর ধর্মে/আর মানুষ আহমদের উপর।/কসম তোমার জনকের, সে পয়দা করেছে বদ!/ এক হানিফ আঘাত হেনেছে তোমাকে রাত্রিবেলা,/বলেছে, ‘বয়স হয়েছে তোমার তবু এই নাও।’/যে তোমাকে হত্যা করেছে গভীর রাত্রিকালে।/সে মানুষ কি জ্বিন তা আমি জানতাম, কিন্তু আমি তা বলব না।”
তিন.
একই ঘটনা মহিলা কবি আসমা বিনতে মারওয়ানের হত্যাকান্ড নিয়েও, বর্ণনা রয়েছে পৃষ্ঠা ৬৮৭-৮৮ এ। (গিয়ামের বইয়ের ৬৭৫ পৃষ্ঠা) বানু আফাককে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় সে ধর্মত্যাগ করে এবং একটি কবিতা লেখে নও মুসলিমদের সমালোচনা করে। নবীর ইচ্ছায় তাকে হত্যা করা হয়।
সিরাতের বইটিতে ‘আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যা করার জন্য উমাইর ইবনে আদিই-ও যাত্রা’ শিরোনামে ঘটনাটি এরকম:
“ সে ছিল বানু উমাইয়া ইবনে জায়দ বংশের। আবু আফাককে হত্যা করার পর সে ধর্মত্যাগ করে। তার পিতার সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আল-হারিছ ইবনে আলফুদায়ল বলেছেন যে ইয়াদিন ইবনে জায়দ নামক বানু খাতমার এক লোকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ইসলাম ও তার অনুসারীদের নিন্দা করে সে বলেছিল:
ঘৃণা করি আমি বানু মালিক আর আল-নাবিতকে,/ঘৃণা করি আউফ আর বানু খাজরাজকে।/এক আগন্তুককে তোমরা মানো/যে মুরাদ কিংবা মাদ্ধিজের নয়।*/তোমাদের সর্দারদের নিধন করার পর/কি ভালো তোমরা আশা করছ তার কাছে,/হত্যা করেছে যে খাবারের সামনে ক্ষুধার্তের মদো?/সম্মানী মানুষ কি একজনও নেই যে আচমকা/ওর উপর আঘাত হেনে তাদের সব আশা নির্মূল করবে?
(* দুইটি ইয়েমেনি গোত্র)
হাসান ইবনে ছাবিত তার জবাব দিয়েছেন:
খাতমার বানু ওয়াইল আর বানু ওয়াকিফ/বানু খাজরাজের চেয়ে নিচু জাত/ সে নির্বুদ্ধিতা তলব করেছে, ধিক তার ক্রন্দনে,/কারণ তার মওত সন্নিকটে!/সে এক মহান জাতের মানুষকে ধরে টান দিয়েছে/যার আসা যাওয়া সব সম্ভ্রান্ত।/মধ্যরাত্রির পূর্বে তার রক্তেই তাকে সে রঞ্জিত করেছে,/তাতে তার অপরাধ হয়নি কোন।/
তার (আসমা বিনতে মারওয়ানের) এইসব কথা শুনে রাসুল (সা) বললেন, ‘কে আমাকে বাঁচাবে মারওয়ানের মেয়ের হাত থেকে?’ তখন তার সঙ্গে ছিলেন উমাইর ইবনে আদিই আল খাতাম, তিনি রাসুল (সা) এর এই কথা শুনছিলেন। সেই রাত্রেই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে তাকে কতল করেন। ভোরে এসে রাসুলের (সা) কাছে তার কীর্তির কথা নিবেদন করলেন। রাসুল (সা) বললেন, ‘তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে (সা) সাহায্য করেছ হে উমায়র!’
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এর জন্য তার কোন অনিষ্ট হতে পারে কিনা। রাসুল (সা) বললেন, ‘দুটো ছাগলও তার জন্য মাথা নাড়বে না।’
উমায়র আপন সম্প্রদায়ের কাছে চলে গেলেন।”
অনলাইনে গিয়ামের বইটি সহজলভ্য : https://www.thereligionofpeace.com/…/Guillaume–Life…
হাদিসের বর্ণনা
বুখারি ভলিউম ৫ বুক নম্বর ৫৯ হাদিস নম্বর ৩৬৯
“ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত:
আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ এবং আল্লাহর নবীকে দুঃখ দিয়েছে কাব বিন আল আশরাফ, কে তাকে হত্যা করতে ইচ্ছুক। তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা উঠে দাড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কি চান আমি তাকে হত্যা করি?’ নবীজী (সা.) বললেন, ‘হ্যা।’ মুহাম্মদ বিন মাসলামা বললেন, ‘তাহলে আমাকে কিছু মিথ্যা বলার অনুমতি দিন (কাবকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য)।’ নবী (সা.) বললেন, ‘তুমি তা বলতে পারো।’ তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা কাবের কাছে গেলেন এবং বললেন .. .. ..(এরপর হত্যাকান্ডের বাকী অংশ)।”
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত পুরো হাদিসটির সঙ্গে ইবনে ইসহাকের বইয়ের বর্ণনা মিলিয়ে পড়লে যে কোন পাঠকই বুঝতে পারবেন হাদিসটি কোন সূত্রে এসেছে। (সংক্ষিপ্ত আকারে একই হাদিস মিলবে এ বইয়েরই অন্যত্র। দেখুন বুখারি ভলিউম ৪ বুক নম্বর ৫২ হাদিস নম্বর ২৭১।)
হাদিসের জন্য : http://www.sahih-bukhari.com/Pages/Bukhari_5_59.php
http://www.sahih-bukhari.com/Pages/Bukhari_4_52.php
উপরের হাদিসটির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা) গ্রন্থে। (গিয়ামের ৩৬৭ পৃষ্ঠায় নানাবিধ কবিতা সংবলিত কাহিনীটিই সংক্ষেপে হাদিসে বিধৃত হয়েছে। বাংলার জন্য দেখুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদের দ্বিতীয় খন্ডের ২২৫ পৃষ্ঠায়।)
‘কা’ব ইবনে আল আশরাফ নিধন’ শীরোনামে কাহিনী বর্ণনা এরকম:
“তারপর সে (কা’ব) মুসলামান রমণীদের নিয়ে অপমানজনক প্রেমের কবিতা রচনা করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আল-মুগিতের বর্ণনা অনুযায়ী, রসুল (সা) বললেন, ‘এই ইবনুল আশরাফের যন্ত্রণা থেকে কে মুক্তি দেবে আমাকে?’
বানু আবদুল আশালের ভাই মুহম্মদ ইবনে মাসলামা বলল, ‘আপনার জন্য আমি ওকে দেখে নেব হে রাসুলুল্লাহ। আমি ওকে হত্যা করব।’
রাসুল (সা) বললেন, ‘তাই করো যদি পারো।’
তিনদিন মুহম্মদ ইবনে মাসলামা ওত্ পেতে রইল দানাপানি ত্যাগ করে। যেটুকু নেহায়েত না করলেই নয় তাই করল। রাসুল (সা) সে কথা শুনে তাকে ডাকলেন এবং উপবাসের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, সে তাকে কথা দিয়েছে এবং এখন বুঝতে পারছে না সে তার ওয়াদা রাখতে পারবে কিনা। রাসুল (সা) বললেন, তোমার দায়িত্ব তো কেবল চেষ্টা করা।’ সে বলল, ‘আমাদের কিছু মিথ্যা বলতে হবে রাসুলুল্লাহ।’ রাসুল (সা) বললেন, সে তোমাদের খুশি, এ বিষয়ে তোমার স্বাধীনতা আছে।” (এরপর বাকী অংশ হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যাকান্ড। বর্ণনার সঙ্গে হাদিসের বর্ণনার বিষ্ময়কর মিল রয়েছে। বর্ণনার শেষে কাবের কবিতা উদ্ধৃত করা হয়েছে।)
উপসংহার
অধিকাংশ মুসলিমই নবীর সহনশীল চরিত্র সম্পর্কে অবগত। (তার চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন যে নারী তার ব্যাপারেও নবীজী চূড়ান্ত ধৈর্য ধারণ করেছিলেন, এরকম কাহিনীও আমরা বিভিন্ন সেকেন্ডারি সূত্রের বরাতে জানতে পারি। তায়েফে রক্তাক্ত হওয়ার পরও তিনি আক্রমণকারীদেও জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ইত্যাদি।) হাদিসের আলাপ বাদ দিলে শুধু কোরানেই নবীর ধৈর্যশীলতা এবং বিরুপ আচরণ সহ্য করার কথা বারবার বলা হয়েছে।
৭৪:৭ এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করো।
২০:১৩০ সুতরাং উহারা যাহা বলে সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করো।.. ..
৫০: ৩৯-৪০ অতএব উহারা যাহা বলে তাহাতে তুমি ধৈর্য ধারণ করো।. . .
১৩:৩২ তোমার পূর্বেও অনেক রাসুলকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হইয়াছে এবং যাহারা কুফরি করিয়াছে তাহাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়াছিলাম, তাহার পর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!
এবং তিনি যে ধৈর্য ধারণ করেছিলেন তার নমুনাও রয়েছে কোরআনের আয়াতে। (৩৩:২১, ৯:১২৮ ইত্যাদি)
তাহলে?
অনেকে বলেন, কিছু হাদিস দুর্বল, সেগুলিকে নির্ভর করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। কিন্তু এই হাদিসগুলি বুখারি শরিফের। এবং বুখারিসহ সেরা ছয় হাদিসের বইগুলি থেকে দুর্বল/জাল হাদিস বাদ দিয়ে পরবর্তী সংস্করণ করার কোন নমুনা দেখা যায়নি। এসব হাদিসের ভিত্তিতে যখন ওয়াজ করে ইসলামের প্রচার করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তা অনেকের মনে অসহিষ্ণুতার/সহিংসতার বীজ বুনে দেয়, ইসলাম সম্পর্কেও দেয় ভ্রান্ত ধারণা। উদ্দেশ্যমূলকভাবেও এসব ব্যবহার করে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে তরুনদের মনমগজকে প্রভাবিত করে ধর্মের নামে সহিংসতা তথা নির্বিচার হত্যায় উদ্ধুদ্ধ করেন। নবীর সামান্য মানহানিকর আলাপ-আলোচনায়ও চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে সহিংস কর্মকান্ডে লিপ্ত হন অনেকে। অথচ কোরআনে এমনকি আল্লাহ এও বলেছেন, কেউ যদি আল্লাহ সম্পর্কেও মন্দ কথা বলে তবে মুমিনের কর্তব্য সেখান থেকে চলে যাওয়া। অন্য ধর্মের দেবদেবীকে নিয়ে কুত্সা ছড়ানোর নিষেধও রয়েছে পরিস্কার ভাষায়।
৪:১৪০ কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করিয়াছেন যে, যখন তোমরা শুনিবে আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হইতেছে এবং উহাকে বিদ্রুপ করা হইতেছে, তখন যে পর্যন্ত তাহারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হইবে তোমরা তাহাদের সঙ্গে বসিও না।
৬:১০৮ আল্লাহকে ছাড়িয়া যাহাদেরকে তাহারা ডাকে তোমরা তাহাদেরকে গালি দিও না। কেননা তাহারা সীমালংঘন করিয়া অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গালি দিবে।
ধারণা করা যায়, এরপরও এরকম যুদ্ধংদেহি পরিস্থিতির সৃষ্টির অন্যতম কারণ, অর্থ বুঝে কোরআন পাঠে অনীহা-অমনোযোগ এবং নানারকম সেকেন্ডারি সোর্সের বর্ণনায় নির্বিচার আস্থা, মুরুব্বী/শিক্ষক/আলেম/হুজুরদের বয়ান অন্ধের মতো অনুসরণ করা। যে কারণে এখনো অনেক মুসলিম মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্য বিচার করতে পারেন না, সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ মনে করেন, কুকুরকে মনে করেন শয়তানের সহচর ইত্যাদি। অথচ কোরআনে পরিস্কার ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছে, না বুঝে, যাচাই না করে কারো দেওয়া কোন তথ্য অন্ধের মতো মেনে নেওয়া ঠিক নয়।
৮:২২ আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির ও মূক যাহারা কিছুই বোঝে না।
৩৩:৬৭ তাহারা (দোযখবাসীরা) আরও বলিবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও প্রভাবশালীদের আনুগত্য করিয়াছিলাম এবং উহারা আমাদের পথভ্রষ্ট করিয়াছিল।
১৭:৩৬ যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নাই উহার অনুসরণ করিও না; কর্ণ, চক্ষু, হূদয়- উহাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত তলব করা হইবে।