বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা। জুম্মার নামাজে গিয়েছিলেন এক লোক। সেখানে খুত্বায় রোজা রাখা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে বয়ান দিতে গিয়ে হুজুর যা বললেন তাতে ওই ভদ্রলোক রীতিমতো বিব্রত। ভেবেছিলেন মুরুব্বীদের কেউ না কেউ আপত্তি জানাবে। কিন্তু কেউ কিছু বলেনি।
কী বলেছিলেন হুজুর?
বলেছিলেন, রোজা রাখা অবস্থায়ও নবীজী (সাঃ) তার স্ত্রীদের আদর-সোহাগ করতেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার দারুন ক্ষমতা ছিল তার। অনেক সাহাবীও এরকম কাজ করতেন। ফলে এরকমটা করা যাবে, তবে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
ওই ভদ্রলোকের বিবরণ পড়ার পর কয়েকটি ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে দেখেছি, অনেক শায়খ, মওলানাই একইরকম ফতোয়া দিয়েছেন।
তাদের আর দোষ কী! বুখারি শরিফে একাধিক হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজী (সাঃ) রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীদের চুম্বন করতেন (বুখারি শরিফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খন্ড নং ৩১৬, তৃতীয় খন্ড সাওম অধ্যায় ১৮০৪, ১৮০৫, ১৮০৬, এবং সুনানে আবু দাউদ কিতাব আল সিয়াম ২৩৭৮, ২৩৮০ ইত্যাদি)। নির্দোষ চুমু যে নয় সেটা হাদিসের বিবরণ পড়লেই পরিস্কার হয়।
রোজার শিষ্টাচার ও আধ্যাত্মিক মূল্যের ব্যাপারে তিলমাত্র ধারণা যার আছে সে-ই জানে রোযা রাখা অবস্থায় পানাহারের সঙ্গে সঙ্গে সর্বপ্রকার স্ত্রী সংসর্গও নিষেধ। (২:১৮৭) যে রোযা রাখার উদ্দেশ্য তাক্বওয়ার চর্চা, অর্থাত্ পরহেয করে চলা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চলা সেখানে আল্লাহর নবী কোরআনের নিষেধ উপেক্ষা করে সামান্য পরিমাণেও স্ত্রী সংসর্গ করেছেন, এ কথা কবুল করে নেয়া অসম্ভব।
২:১৮৭ সিয়ামের রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ (আরবী রাফাসু) বৈধ করা হইয়াছে।
স্বাভাবিক যুক্তিতেই এর অর্থ দিনের বেলা স্ত্রীসংসর্গ নিষেধ। আরবী রাফাস দিয়ে শুধু শারীরিক মিলন বোঝায় না। কামনাজড়িত যে কোন ধরণের কথা ও কাজ; স্পর্শ, আলিঙ্গন, চুম্বন এর মধ্যে পড়ে। লেনের অভিধানে রাফাসা ইয়ামরাতিহি এর অর্থ করতে গিয়ে বলা হয়েছে-He compressed his wife; and he kissed her; and held amatory and enticing talk, or conversation, with her; and did any other similar act, of such acts as occur in the case of coition. (অ্যান অ্যারািবিক-ইংলিশ লেক্সিকন, ভলিউম ৩, পৃষ্ঠা ১১১৮) বাদাভি-হালিমের অভিধানেও রাফাস শব্দের অর্থ হিসেবে যে কোন ধরনের অশ্লীলতা, অশোভন কর্ম, অশ্লীল আচরণ, মিলনকে উল্লেখ করা হয়েছে। ( Arabic-English Dictionary of Quranic usage, page 373)
শুধু এই হাদিস নয়, নবীজী (সাঃ) এর প্রসঙ্গে বিকৃত রুচির আরো অনেক হাদিস বুখারি শরিফসহ হাদিসের বইগুলোতে পাওয়া যাবে। যেমন ঋতুকালীন অবস্থায় অবস্থায় নবীজী স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা/আদর (আরবী ইউবাশিরাহা) করতেন। এর আগে স্ত্রীরা শুধু ইজের (কোমর থেকে নিচ অব্দি একটি পোশাক) পড়ে নিতেন। (আস্তাগফিরুল্লাহ) (দেখুন বুখারি শরিফ, প্রথম খন্ড হায়জ অধ্যায়, ২৯৫, ২৯৬, ২৯৭, ৩১৬, ৩১৭ ইত্যাদি)। অথচ কোরআনে ঋতুকালীন অবস্থায় স্ত্রী সংসর্গ এড়িয়ে চলার নির্দেশ রয়েছে। (২:২২২)।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য,
হাদিসের বিবরণের বাংলা অনুবাদে ‘বাশিরাহা’র অর্থ হিসেবে লেখা আছে আদর করা বা মেলামেশা করা। ইংরেজি অনুবাদে লেখা আছে fondling. আদতে এখানে অর্থটিকে অনেক লাঘব করে দেখানো হয়েছে। অভিধানে বা কোরআনেও শব্দটির ব্যবহার এর চেয়েও গভীরতর অর্থ বহন করে। ২:১৮৭ আয়াতেই শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।
২:১৮৭ … সুতরাং এখন তোমরা তাহাদের সঙ্গে সঙ্গত হও (বাশিরুহুন্না) এবং আল্লাহ যাহা তোমাদের জন্য নির্ধারিত করিয়াছেন তাহা কামনা কর।
এখানে রোজাকালীন যে স্ত্রী-সংসর্গের নিষেধ ছিল রাতের বেলা সেটারই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থাত্ হাদিসে যে মেলামেশার কথা বলা হয়েছে, সেটি শারীরিক মিলনও হতে পারে।
মানসিক বিকারের এরকম অনেক উদাহরণ হাদিসের বইগুলাতে ছড়িয়ে আছে। কিছু হাদিসের নমুনা-
নবীজী (সাঃ) এক রাতে সব স্ত্রীদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন (আস্তাগরুিল্লাহ) (বুখারি শরিফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খন্ড, গোসল অধ্যায় ২৬৬)। শুধু কাপড়ে লেগে থাকা বীর্য ধুয়ে সেই কাপড় পরেই নবীজী (সাঃ) নামাজে যেতেন (প্রথম খন্ড, ওজু অধ্যায় ২২৯, ২৩০, ২৩১)। তিনি সবার সামনে উলঙ্গ হয়েছিলেন (আস্তাগফিরুল্লাহ) (প্রথম খন্ড/সালাত অধ্যায় নং৩৫৭) ইত্যাদি ইত্যাদি।