ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, পড়ে আসছি রাসুলরা আসমানি কিতাব পেয়েছেন, নবীরা পাননি। তাদের মধ্যে পার্থক্য এটাই। খটকা লেগেছে তাহলে খাতুমুন নবিয়্যিন না বলে খাতুমুর রাসুলুন বললেই কি ঠিক হতো না?
যাহোক, এখনো স্কুল পর্যায়ের বিভিন্ন পাঠ্যপুসত্মকে এই ধারণাই এবং এরকম আরো অনেক কিছু শেখানো হচ্ছে।
অষ্টম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিড়্গা বইয়ের পাঠ ৪ এ রিসালাত পর্বে (পৃষ্ঠা ১০) নবী ও রাসুলের পার্থক্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে Èআলস্নাহতায়ালা যাদের প্রতি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন কিংবা নতুন শরিয়ত প্রদান করেছেন তারা হলেন রাসুল। আর যার প্রতি কোন কোনো অবতীর্ণ হয়নি কিংবা যাকে কোন নতুন শরিয়ত দেওয়া হয়নি তিনি হলেন নবি। তিনি তার পর্বূবতী রাসুৃলের শরিয়ত প্রচার করতেন। এ হিসেবে সকল রাসুলই নবি ছিলেন।’
কে নবী আর কে রাসুল সেটা সবচেয়ে ভালো জানবেন নিশ্চয়ই আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন। কোরআন শরিফে তিনি এ প্রসঙ্গে কি বলছেন সেটা একটু দেখা যাক।
কোরানে খুব পরিস্কার করেই এই দুইয়ের পার্থক্য নির্দেশ করা আছে।
নিচের আয়াতগুলো লড়্গ্য করম্নন।
৬:৮৯
আমি উহাদেরকেই কিতাব, কতৃত্ব ও নবুওত প্রদান করিয়াছি, অতঃপর যদি উহারা এইগুলি প্রত্যাখ্যানও করে তবে আমি তো এমন এক সম্প্রদায়ের প্রতি এইগলির ভার অপর্ণ করিব যাহারা এইগুলি প্রত্যাখ্যান করিবে না।
২:২১৩
সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মত। অতঃপর আল্লাহ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরুপে প্রেরণ করেন। মানুষেরা যে বিষয়ে মতভেদ করিত সে বিষয়ে তাহাদের মধ্যে মীমাংসার জন্য তিনি তাহাদের সঙ্গে সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেন…।
৩:৭৯
কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত ও নবুয়াত দান করিবার পর সে মানুষকে বলিবে Èআমার দাস হইয়া যাও’ ইহা তাহার জন্য সঙ্গত নহে,….
৩:৮১
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার লইয়াছিলেন যে, Èতোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যাহা কিছু দিয়াছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যাহা আছে তাহার প্রত্যায়নকারীরুপে যখন একজন রাসুল আসিবে তখন তোমরা অবশ্যই তাহার প্রতি ইমাণ আনিবে ও তাহাকে সাহায্য করিবে।’ তিনি বলিলেন, তোমরা কি স্বীকার করিলে? এবঙ এই সম্পর্কে তোমরা কি আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করিলে? তাহারা বলিল, আমরা স্বীকার করিলাম। তিনি বলিলেন, তবে তোমরা স্বাক্ষী থাক। এবং আমিও তোমাদের সাক্ষী রহিলাম।
উপরের আয়াতগুলো দিয়ে এটা পরিস্কার যে, নবীরাই কিতাব, প্রজ্ঞা ও কতর্ৃত্ব নিয়ে এসেছেন, রাসুলরা নন।
কোরানের বর্ণনামতে নবুয়তের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। নিচের আয়াতে এটা পরিস্কার করে বলা আছে।
৩৩:৪০
মুহম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরম্নষের পিতা নয়; বরং সে আলস্নাহর রাসুল এবং শেষ নবি।
লড়্গ্যনীয় এখানে কিন্তু শেষ রাসুল বলা হয়নি। এটি উলস্নেখযোগ্য একারণেও যে কোরান শব্দচয়নের ড়্গেত্রে খুবই সতর্ক।
রাসুল শব্দের সাধারণ অর্থ – যার উপরে কোন বার্তা বহনের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। একজন বার্তাবহনকারী।
যেমন রাজা জেলখানায় ইউসুফ (সাঃ)কে ডেকে আনার জন্য যাকে (কোন রাজকর্মচারী) পাঠানো হয়েছিল তাকেও রাসুল বলে উলে্লখ করা হয়েছে-
১২:৫০
রাজা বলিল, তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে লইয়া আস। যখন দূত (আরবী রাসুল) তাহার নিকট পেৌছিল তখন সে বলিল, তুমি তোমার প্রভুর নিকট ফিরিয়া যাও এবং তাহাকে জিজ্ঞেস কর, যে নারীগণ হাত কাটিয়া ফেলিয়াছিল তাহাদের অবস্থা কী! নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক তাহাদের ছলনা সম্যক অবগত।
নিচের আয়াতে রাসুলের বহুবচন রাসুলু শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করুন। এটা মুহম্মদ (সাঃ) কে লক্ষ্য করে যে বলা হয়নি তা পরিস্কার। নবীর সমকালে যারা আলস্নাহর বাণী/বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে জড়িত ছিলেন তাদের তাদের সকলকেই রাসুল বলে উলে্লখ করা হয়েছে এই আয়াতে-
২৩: ৫১
হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হইতে আহার কর ও সত্কর্ম কর। তোরমা যাহা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।
সুতরাং রাসুল বলতে আমরা যা ভাবি তার চেয়েও বিস্তৃত এর অর্থ।
মুসলিমদের মধ্যে ধারণা রাসুলরাই কিতাব নিয়ে আসেন। নবীরা শুধু তা নিশ্চিত করেন। কিন্তু কোরানের আয়াত পর্যালোচনা করলে এর উল্টোটাই সত্য বলে মনে হয়। নবীরাই বরং গুরুতর দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। তাদের মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন কিতাব পেয়েছি। রাসুলরা কালে কালে সেসব কিতাবের সত্যতাকে নিশ্চিত করেছেন, তুলে ধরেছেন।
সব জাতির জন্য নবী নাও থাকতে পারেন কিন্তু সব জাতির জন্য রাসুল থাকবেন। অনেক
জাতির জন্য একাধিক রাসুল ছিলেন।
লক্ষ্য করুন নিচের আয়াতগুলো।
২৬:১০৫ নূহের সম্প্রদায় তাহার রাসুলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল।
২৬:১২৩ আদ সম্প্রদায় তাহার রাসুলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল।
২৬:১৪১ সামুদ সম্প্রদায় তাহার রাসুলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল।
২৬:১৬০ লুতের সম্প্রদায় তাহার রাসুলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল।
২৬:১৭৬ আয়কাবাসীরা তাহার রাসুলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল।
এসব আয়াত থেকে বোঝা যায় একজন নবীকে সহায়তাকারী একাধিক রাসুল একই সময়ে থাকতে পারেন।
৩৬:১৪ যখন উহাদের নিকটে পাঠাইয়াছিলাম দুইজন রাসুল তখন উহারা তাহাদিগকে মিথ্যাবাদী বলিয়াছিল, অতঃপর আমি তাহাদিগকে শক্তিশালী করিয়াছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা। তাহারা বলিয়াছিল, Èআমরা তো তোমাদের নিকট প্রেরিত হইয়াছি।’
রাসুলের সহায়তকারীও রাসুল হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
****
প্রতি বছর পাঠ্যপুসত্মক ছাপা হয়ে বিতরণের পর বিভিন্ন পত্রিকায় বইয়ের বিভিন্ন ক্রটির উলস্নেখ করে বিশেষ প্রতিবেদন থাকে। কিন্তু বইয়ের ভিতরের বিচিত্র সব ভুলের খতিয়ান কখনো চোখে পড়েনি| কুরআনের মোকাবেলায় হাদিস ব্যবহার করে কেউ যদি নিজেদের মনের মতো শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করেন তার দায় তাদেরই।
এরকম আরো অনেক ভুলের ছড়াছড়ি রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর ধর্ম ও নৈতিক শিড়্গার বইগুলিতে। আশু সংশোধন আবশ্যক।