ধর্মের অপব্যাখ্যা করে নারীর অবমাননা করা হচ্ছে – এমন কথা পলিটিশিয়ান থেকে নারী নেত্রী সকলেই বলে থাকেন। কিন্তু কোথায় কোথায় এই অবমাননা হচ্ছে সেটি নির্দষ্টি করে বলেন না। বললেই যে অবমাননা ফুরিয়ে যেতো তা হয়ত নয়। তবু কিছু ধারণা পরিস্কার হতো।
ভুল ব্যাখ্যার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
৬৪:১৪
হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রীদের (আরবী আঝওয়াজুকুম) ও সন্তানদের মধ্যে কেহ কেহ তোমাদের শত্রু। অতএব তাহাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থাকিও। তোমরা যদি উহাদেরকে মার্জনা কর, উহাদের দোষক্রটি উপেক্ষা কর, তবে জানিয়া রাখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
একজন নারী পাঠকের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, স্বামীদের কথা নেই কেন এখানে? তাদের কি কোন সমস্যা নেই? তারা শত্রু হতে পারে না? কেবল স্ত্রীরাই শত্রু, সব দোষ তাদেরই?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপরের আয়াতের Èআঝওয়াজ’ শব্দটির অনুবাদ করা হয় Èস্ত্রীদের’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ইংরেজিতে স্পাউস বলতে আমরা যা বুঝি আরবীতে সেটাই Èআঝওয়াজ’। শব্দটি পুংলিঙ্গবাচক বহুবচন। আরবী ব্যকরণ অনুযায়ী বহুবচনে পুংলিঙ্গ বিশেষ্য পদ দ্বারা নারী পুরুষ উভয়কে বোঝানো যেতে পারে। এর মূল ঝে ওয়া জিম, যার অর্থ জোড়া, জুটি, বিবাহ, যোগ কিংবা সঙ্গী ইত্যাদি। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এর অর্থ নির্ধারণ হয়। কখনো স্বামী কখনো স্ত্রী। জাতিবাচক ব্যবহারের বেলায় উভয়কেই বোঝাবে। এডওয়ার্ড লেন এর অ্যান অ্যারাবিক-ইংলিশ লেক্সিকনসহ যে কোন চিরায়ত আরবী অভিধানেও এই অর্থই মিলবে। এছাড়াও দেখতে পারেন অ্যারাবিক-ইংলিশ ডিকশনারি অফ কোরানিক ইউসেজ (বাদাভি/হালিম) পৃষ্ঠা ৪০৫ অথবা ডিকশনারি অফ দি হোলি কোরআন (আবদুল মান্নান ওমর), পৃষ্ঠা ২৩৭।
উপরের আয়াতে যখন সকল মুমিনদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে, সুতরাং এটি নারী পুরুষ উভয়কেই নির্দেশ করে। তাই পুরুষ পাঠকের ক্ষেত্রে শব্দটি স্ত্রী এবং স্ত্রী পাঠকের কাছে স্বামী হবে। অর্থাত্ স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ব্যাপারেই (এবং সন্তানদের ) সতর্ক থাকার কথাই বলা হয়েছে আয়াতটিতে।
আরবী ভাষার বিচারে বা আয়াতের প্রেক্ষাপটে এখানে শুধুমাত্র স্ত্রীদের কথা বলা অন্যায়। কোরআনের অনেক স্থানেই শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। এবং অন্যায়ভাবে অনেক ক্ষেত্রেই এর অর্থ স্ত্রীদের করা হয়েছে।
পুরুষপ্রধান বিশ্বে নানামুখী চাপ উপেক্ষা করেই নারীরা নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন, নিচ্ছেন। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপরিচালনার কাজও করছেন অনেক নারী। সুদুর অতীতেও এর দৃষ্টান্ত রয়েছে (শেবার রাণী, দেখুন ২৭:৩৩)।
কোরআনের আয়াতের ভুল অনুবাদ/ব্যাখ্যা করেও নারীকে দাবিয়ে রাখা হয় বটে। বিভিন্ন সেকেন্ডারি সোর্স, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, সমাজের প্রচলিত রীতি এবং ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাচেতনা অর্থ বোঝা ও অনুবাদের ক্ষেত্রে অনিবার্যভাবে ছাপ রাখে, সন্দেহ নেই। কিন্তু কমনসেন্স ও আরবী ভাষার সামান্য জ্ঞানও বিষয়গুলিকে পরিস্কার করে তুলতে পারে।
নিচের লিংকটিতে এরকম আরো কিছু ভুল ব্যাখ্যা নিরসন করা হয়েছে।