নবীর (সাঃ) চরিত্র হননকারী হাদিস

হাদিস শাস্ত্রের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিস্তর আলেম বিভিন্ন হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অনেক হাদিসকে বাতিল, দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। লক্ষ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করে বুখারি মুসলিমরা তার ভিতর থেকে বাছাই করে যে সামান্য কয়েক হাজার হাদিস নিজেদের গ্রন্থে ঠাঁই দিয়েছেন তারও সিংহভাগ পরবর্তী যুগের আলেমরা নাকচ করে দিয়েছেন নানা বিচারে। সর্বাধিক সহীহ বিবেচনায় সম্ভবত বুখারির বইটিকে সহীহ বুখারি বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু তার ভিতরেও যে বিস্তর পরষ্পরবিরোধী, অর্থহীন, নারীর অবমাননাকারী, নবীর চরিত্রহননকারী হাদিস রয়েছে যা অবিশ্বাস্য। সুস্থ মস্তিষ্কের যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে জরুরী বলে বিবেচিত গ্রন্থে এসব হাদিস ঠাঁই পেলো কীভাবে?

শুরুতে আমরা নমুনা হিসেবে নবীর জন্য মানহানিকর কিছু হাদিস তুলে দিচ্ছি বুখারি শরিফ থেকে। এসব হাদিসের বাইরেও বুখারিতে আরও অনেক হাদিস আছে যা নবীর জন্য অমর্যাদাকর।

১. প্রবঞ্চনার মাধ্যমে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন নবীজী (সাঃ)! (আস্তাগফিরুল্লাহ)

জাবির ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কাব ইবন আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছ কে? কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবন মাসলামা দাড়ালেন এবং বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হাঁ। তখন মুহাম্মদ ইবন মাসলামা বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হ্যা বল। এরপর মুহাম্মদ ইবন মাসলামা কাব ইবন আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি [রাসুল (সাঃ)] আমাদের কাছে সাদকা চায়। এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই (বাধ্য হয়ে) আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কাব ইবন আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ট করে তুলবে। মুহাম্মদ ইবন মাসলামা বললেন, আমরা তো তাকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাড়ায় তা না দেখে এখনই সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, আমর আমার নিকট হাদিসটি কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে স্মরণ করিয়ে বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। তখন তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এেক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। কাব ইবন আশরাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবন মাসলামা বললেন, কি জিনিস আপনি বন্ধক রাখতে চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবন মাসলামা বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিহ=কট কি করে আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদের বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদের আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হলো অস্ত্রশস্ত্র। অবশেষে তিনি (মুহাম্মদ ইবন মাসলামা) তাকে (কাব ইবন আশরাফকে) পুনরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব ইবন আশরাফের দুধভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপরতলা থেকে নিচে) নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মদ ইবন মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি)। আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কাবের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব ইবন আশরাফ বলল, মুহাম্মদ ইবন মাসলামা এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিত্। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মদ ইবন মাসলামা সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে (তথায়) গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দুজন মানুষ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কাব ইবন আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মদ ইবন মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবু আবস ইবন জাবর হারিস ইবন আওস এবং আব্বাদ ইবন বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই ব্যক্তিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার মাথার চুল ধরে শুকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মদ ইবন মাসলামা) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুকাব। সে (কাব) চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন (মুহাম্মদ ইবন মাসলামা বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কাব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী আছে। আমর বলেন, মুহাম্মদ ইবন মাসলামা বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যা। এরপর তিনি তার মাথা শুকলেন এবং তার সাথীদের শুকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে (আরেকবার শুকবার জন্য) অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যা। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা হত্যা কর। তারা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী (সাঃ) এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩৭৪২)

কা’ব এর অপরাধ ছিল সে মুসলামান রমণীদের নিয়ে অপমানজনক প্রেমের কবিতা রচনা করেছিল। ইবনে ইসহাকের সীরাতে রাসুলুল্লাহ গ্রন্থে এরকমই ঘটনার বিবরণ রয়েছে মহিলা কবি আসমা বিনতে মারওয়ানের হত্যাকান্ড নিয়ে। এই মহিলা নও মুসলিমদের সমালোচনা করে কবিতা লিখেছিলেন, পরে নবীর ইচ্ছায় তাকে হত্যা করা হয়। (সিরাতে রাসুলুল্লাহ, ইফা, পৃষ্ঠা ৬৮৭)

২. কোন হুমকি না থাকা সত্ত্বেও নবী হত্যার নির্দেশ দিলেন

ক. সালামা ইবন আকওয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এর কোন এক সফরে মুশরিকদের একদল গুপ্তচর তার নিকট এল এবং তার সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল ও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তাকে খুঁজে আন এবং হত্যা কর। নবী (সাঃ) তার মালপত্র হত্যাকারীকে দিয়ে দিলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ২৮৩৬)

খ. বারা ইবনে আযিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দশ জনের কম একটি দলকে আবু রাফির উদ্দেশ্যে পাঠালেন। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রাতের বেলা তার ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হত্যা করেন। [বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খন্ড পৃষ্ঠা ৫২৭, হাদিস নং ৩৭৪৩]

এর ঠিক পরের হাদিসেই এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত ভয়ংকর বর্ণনা রয়েছে। এরকম আরো কিছু হত্যাকাণ্ডের বিবরণ রয়েছে বুখারি শরিফে যেগুলি নবীর চরিত্রের সঙ্গে মানানসই নয়।

নবীজীর (সাঃ) নিষ্ঠুরতার আরো কয়েকটি বিবরণ:

ক. আনাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উকল বা উরায়না গোত্রের কিছু লোক (ইসলাম গ্রহণের জন্য) মদীনায় এলে তারা পীড়িত হয়ে পড়ল। নবী (সাঃ) তাদের (সদকার) উটের কাছে যাবার এবং ওর পেশাব ও দুধ পান করার নির্দেশ দিলেন। তারা সেখানে চলে গেল। তারপর তারা সুস্থ হয়ে নবী (সাঃ) এর রাখালকে হত্যা করে ফেলল এবং উটগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। এ খবর দিনের প্রথম ভাগেই এসে পৌছল। তিনি তাদের পেছনে লোক পাঠালেন। বেলা বেড়ে উঠলে তাদেরকে (গ্রেফতার করে) আনা হল। তারপর তার আদেশে তাদের হাত পা কেটে দেওয়া হল। উত্তপ্ত শলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুড়ে দেওয়া হল এবং গরম পাথুরে ভূমিতে তাদের নিক্ষেপ করা হল। তারা পানি চাইছিল, কিন্তু দেওয়া হয়নি।
আবু কিলাবা বলেন, এরা চুরি করেছিল, হত্যা করেছিল, ঈমান আনার পর কুফরী করেছিল এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ২৩৩)

[মন্তব্য: নবীজীকে এখানে কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে সেটা লক্ষণীয়। এর সঙ্গে কোরআনে নবীর যে অনুপম চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে ৬৮:৪ আয়াতে সেটা মিলিয়ে দেখুন।]

খ. যুদ্ধে নারী ও শিশুদের জন্য কোন ছাড় নয়

সা’ব ইবন জাসসামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করেন। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমণে তাদের মহিলা ও শিশুগণ নিহত হয়, তবে কি হবে? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আর আমি তাকে আরো বলতে শুনেছি যে, সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহতা’আলা ও তার রাসুল (সাঃ) ব্যতীত আর কারো জন্য হতে পারে না। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ২৮০৪)

গ. আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন নবী
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে কোন এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যক্তিকে পাও তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে দেবে। তারপর আমরা যখন বের হতে চাইলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কিন্তু আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া আল্লাহতা’আলা ব্যতীত অন্য কারও জন্য সমীচীন নয়। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে পাও, তবে তাদের হত্যা কর। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ২৮০৭)

৩. রোজা রাখা অবস্থায় নবীজী (সাঃ) চুম্বন করতেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)

উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সাঃ) এর সঙ্গে একই চাদরের নিচে শায়িত অবস্থায় আমার হায়য দেখা দিল। তখন আমি চুপিসারে বেরিয়ে এসে হায়যের কাপড় পরে নিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন: তোমার কি হায়য শুরু হয়েছে? আমি বললাম, হাঁ। তখন তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁর চাদরের নিচে স্থান দিলেন। বর্ণনাকারী যয়নাব বলেন, আমাকে উম্মে সালামা এও বলেছেন যে, নবী (সাঃ) রোযা রাখা অবস্থায় তাকে চুমু খেতেন। [উম্মে সালামা আরও বলেন] আমি ও নবী (সাঃ) একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে জানাবাতের গোসল করতাম। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ৩১৬) [এছাড়াও দেখুন তৃতীয় খন্ড সাওম অধ্যায় ১৮০৪, ১৮০৫, ১৮০৬]

রোজার শিষ্টাচার ও আধ্যাত্মিক মূল্যের ব্যাপারে তিলমাত্র ধারণা যার আছে সে-ই জানে রোযা রাখা অবস্থায় পানাহারের সঙ্গে সঙ্গে সর্বপ্রকার স্ত্রী সংসর্গও নিষেধ। (২:১৮৭) আল্লাহর নবী কোরআনের নিষেধ উপেক্ষা করে সামান্য পরিমাণেও স্ত্রী সংসর্গ করেছেন, এ কথা কবুল করে নেয়া অসম্ভব।

৪. একরাতে নবীজী (সাঃ) তার সকল স্ত্রীর সঙ্গে শুয়েছেন। (আস্তাগফিরুল্লাহ)

ক. আনাস ইবন মালিক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তার নয়জন স্ত্রী ছিলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ২৮০)

খ. আনাস ইবন মালিক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সাঃ) তাঁর স্ত্রীগণের কাছে দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তারা ছিলেন এগারজন। বর্ণনারকারী বলেন, আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরষ্পর বলাবলি করতাম যে, তাকে ত্রিশজনের শক্তি দেওয়া হয়েছে। সা’ইদ কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন, আনাস তাদের কাছে হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ২৬৬)

(এরকম আরো হাদিস আছে। শক্তি প্রসঙ্গে উপরোক্ত হাদিসের ফুটনোটে বলা হয়েছে- কোন কোন রিওয়ায়াতে, বেহেশতী চল্লিশজনের শক্তি দান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তিরমিযীর বর্ণনায় একজন বেহেশতীর শক্তি একশ লোকের শক্তির সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।)

৫. নবীজী (সাঃ) এর বীর্য ধোয়া (আসতাগফিরুল্লাহ)

সুলায়মান বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত, ‘আমি আয়িশাকে কাপড়ে লাগা বীর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।’ তিনি বললেন: আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম। তিনি কাপড় ধোয়ার ভিজা দাগ নিয়ে সালাতে বের হতেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ২৩০ ইত্যাদি)

৬. নবীজীকে (সাঃ) নগ্ন দেখা (আস্তাগফিরুল্লাহ)

জাবির ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কুরাইশদের সাথে (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কাবার (মেরামতের) জন্য পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তার পরনে ছিল লুঙ্গি। তার চাচা আবাস তাকে বললেন, ভাতিজা! তুমি লুঙ্গি খুলে কাধে পাথরের নিচে রাখলে ভালো হতো। জাবির বলেন, তিনি লুঙ্গি খুলে কাধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাৎ বেহুশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাকে আর কখনো বিবস্ত্র অবস্থায় দেখা যায়নি। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ৩৫৭)

৭. নবীজীর গোসলের সময় পর্দা ধরে রেখেছিলেন তার মেয়ে

উম্মে হানী বিনত আবু তালিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে গিয়ে তাকে গোসলরত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা তাকে পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানী। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ২৭৬)

৮. নবীকে (সাঃ) প্রাকৃতিক কর্ম করতে দেখার বর্ণনা (আসতাগফিরুল্লাহ)

আবদুল্লাহ ইবন উমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (আমার বোন) হাফসা এর ঘরের উপর (ছাদে) আরোহণ করি। তখন আমি দেখতে পেলাম, নবী (সাঃ) কিবলাকে পেছন দিকে রেখে শাম (সিরিয়া)মুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে নিচ্ছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ২৮৮৩)

৯. নবীজী (সাঃ) ক্রীতদাস কেনাবেচা করেছেন

জাবির ইবন আবদুল্লাহ তেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরে তার গোলাম আযাদ হবে বলে ঘোষণা দিল। তারপর সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ল। নবী (সাঃ) গোলমটিকে নিয়ে নিলেন এবং বললেন, কে একে আমার নিকট থেকে খরিদ করবে? নুআঈম ইবন আবদুল্লাহ (তার কাছ থেকে) সেটি এত এত মুল্যে খরিদ করলেন। তিনি গোলমটিকে তার হাওলা করে দিলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। চতুর্থ খণ্ড। হাদিস নং ২০০৮)

১০. নবীজী (সাঃ) সুরা ভুলে গিয়েছিলেন

ক. আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) কোন এক ব্যক্তিকে মসজিদে নববীতে কুরআন পাঠ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টমখণ্ড। হাদিস নং ৪৬৬৭)

হযরত হিশাম থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে, ‘যা ভুলে গেছি অমুক অমুক সুরা থেকে।’ আলী এবং আবদা হিশাম থেকে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টমখণ্ড। হাদিস নং ৪৬৬৮)

খ. আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) এক ব্যক্তিকে কুরআন পাঠ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ তাকে রহমত করুন। কেননা, সে আমাকে অমুক অমুক সুরার অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলতে বসেছিলাম। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টমখণ্ড। হাদিস নং ৪৬৬৯ এবং দেখুন ৪৬৭৩)

গ. হযরত আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, কোন লোক এ কথা কেন বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং (আল্লাহর পক্ষ থেকে ) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টমখণ্ড। হাদিস নং ৪৬৭০)

এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন কোরআনের আয়াত

৭৫:১৬ -১৭ তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ব করিবার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা উহার সহিত সঞ্চালন করিও না। ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করাইবার দায়িত্ব আমারই।

১১. নবী যাদুর প্রভাবে পড়েছিলেন

ক. আয়িশা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) কে যাদু করা হয়েছিল। লায়স বলেন, আমার নিকট হিশাম পত্র লিখেন, তাতে লেখা ছিল যে, তিনি তার পিতার সূত্রে আয়িশা থেকে হাদিস শুনেছেন এবং তা ভাল করে মুখস্থ করেছেন। আয়িশা বলেন, নবী (সাঃ) কে যাদু করা হয়। এমনিক যাদুর প্রভাবে তার খেয়াল হতো যে, তিনি স্ত্রীগণের বিষয়ে কোন কাজ করে ফেলেছেন অথচ তিনি তা করেননি। শেষ পর্যন্ত একদিন তিনি রোগ আরোগ্যর জন্য বারবার দুআ করলেন, এরপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি জান? আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, যাতে আমার রোগের আরোগ্য নিহিত আছে? আমার নিকট দুজন লোক আসল। তাদের একজন মাথার কাছে বসল আর অপরজন আমার পায়ের কাছে বসল। এরপর একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যাক্তির রোগটা কি? জিজ্ঞাসিত লোকটি জবাব দিল, তাকে যাদু করা হয়েছে। প্রথম লোকটি বলল, তাকে যাদু কে করল? সে বলল, লবীদ ইবন আ’সাম। প্রথম ব্যক্তি বলল, কিসের দ্বারা (যাদু করল)? দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, তাকে যাদু করা হয়েছে, চিরুনী, সুতার তাগা এবং খেজুরের খোসায়। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, এগুলো কোথায় আছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি জবাব দিল, যারওয়ান কূপে। তখন নবী (সাঃ) সেখানে গেলেন এবং ফিরে আসলেন, এরপর তিনি আয়িশাকে বললেন, কূপের কাছে খেজুর গাছগুলো যেন এক একটা শয়তানের মুণ্ড। তখন আমি (আয়িশা) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সেই যাদু করা জিনিসগুলো বের করতে পেরেছেন? তিনি বলেন, না। তবে আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দিয়েছেন। আমার আশংকা হয়েছিল এসব জিনিস বের করলে মানুষের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি হতে পারে। এরপর সেই কূপটি বন্ধ করে দেয়া হল। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ৩০৪০)

খ. যাদুর প্রভাবে নবী স্ত্রীদের কার সাথে শুয়েছেন ভুলে গেছেন

আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর যাদু করা হয়। এমনকি তার মনে হতো তিনি কাজটি করেছেন অথচ তা তিনি করেননি। অবশেষে এক দিন তিনি যখন আমার কাছে ছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট বার বার দুআ করলেন। তারপর ঘুম থেকে জেগে বললেন ঃ হে আয়েশা! তুমি কি বুঝতে পেরেছ? আমি যে বিষয়ে তার কাছে জানতে চেয়ে ছিলাম, তিনি তা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! তা কী? তিনি বললেনঃ আমার নিকট দুজন লোক এলেন। তাদের একজন আমার মাথার নিকট এবং আরেকজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। তারপর একজন অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ লোকটির কী ব্যাথ্যা? তিনি উত্তর করলেন, তাকে যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বললেনঃ কে তাকে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললেনঃ যুরায়ক গোত্রের লাবীদ ইবন আসম নামক ইয়াহুদী। প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেনঃ যাদু কিসের দ্বারা করা হয়েছে? দ্বিতীয়জন বললেঃ চিরুনী, চিরুনী আচড়াবার সময় সময়ে উঠে আসা চুল ও নর খেজুর খাজের জুব এর মধ্যে। প্রথম জন জিজ্ঞেস করলেন, তা কোথায়? দ্বিতীয় জন বললেনঃ যারওয়ান নাম কূপে। তখন নবী (সাঃ) তার সাহাবীদের কয়েকজনকে নিয়ে ঐ কূপের নিকট গেলেন এবং তা ভাল করে দেখলেন। কূপের পাড়ে ছিল খেজুর গাছ। তারপর তিনি আয়েশার নিকট ফিরে এসে বললেনঃ আল্লাহর কসম! কূপটির পানি (রঙে) মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর ন্যায়। আর পার্শ্ববর্তী খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার ন্যায়। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি সেগুলো বের করবেন না? তিনি বললেনঃ না, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য ও শিফা দান করেছেন, মানুষের উপর এ ঘটনা থেকে মন্দ ছড়িয়ে দিতে আমি শঙ্কোচবোধ করি। এরপর তিনি যাদুর জিনিসপত্রগুলোর ব্যাপারে নির্দেশ দিলে, সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। (বুখারি শরিফ। ইফা। নবম খণ্ড। হাদিস নং ৫৩৫৪)

মন্তব্য: এমন অনেক হাদিসও আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, যাদুর প্রভাবে তিনি অনেক সময় মিথ্যাও বলতেন।

১২. অন্যের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করলেন নবী

(সংক্ষেপিত) আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খাইবারের (ইয়াহুদীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ….আমরা জোরপূর্বক (খাইবার এলাকা) দখল করে নিলাম এবং যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হলো। এই সময় দেহইয়া কালবী এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! বন্দীদের মধ্য থেকে আমাকে একটি দাসী দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যাও, একটি দাসী নিয়ে যাও। সে গিয়ে সাফিয়া বিনতে হুয়াই ইবনে আখতাবকে নিয়ে গেল। এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর নবী! আপনি হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা সাফিয়াকে দেহইয়া কালবীর হাতে সমর্পণ করেছেন। অথচ সে (সাফিয়া) হলো বনু কুরাইযা ও বনু নাযির গোত্রের নেতার কন্যা। সে তো একমাত্র আপনার জন্যই উপযুক্ত হতে পারে। তখন নবী (সাঃ) বললেনঃ সাফিয়াসহ দেহইয়াকে নিয়ে আস। দেহইয়া সাফিয়াসহ আসলে নবী (সাঃ) তাকে (সাফিয়াকে) দেখলেন এবং দেহইয়াকে বললেন ঃ তুমি যাও, বন্দীদের মধ্য থেকে অন্য একজন দাসীকে নিয়ে যাও। আনাস বলেন, নবী (সাঃ) তাকে (স্বাধীন) করে দিয়ে বিয়ে করলেন। …

১৩. নবীর চরিত্রে কলঙ্কলেপনের আরেকটি উদাহরণ

সাহল ইবন সাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী (সাঃ) তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখলেন, নবী (সাঃ) তার সম্পর্কে কোন ফায়সালা দিচ্ছে না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী (সাঃ) এর সাহাবীদের মধ্যে একজন দাড়ালেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনার শাদীর প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সাথে একে শাদী দিয়ে দিন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কি আছে? সে উত্তর করল, না আল্লাহর কসম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি তোমার পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ কিছু পাও কি না। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাও পেলাম না, কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ (শুধু আছে)। (রাবী) সাহল বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, সে তোমার তহবন্দ দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান করো, তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নিরবে বসে থাকল। তারপর উঠে পড়ল। সে যেতে উদ্যত হতে নবী (সাঃ) তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন শরীফ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সুরা মুখস্থ আছে এবং সে হিসাব করল। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে? সে বলল, হাঁ। নবী (সাঃ) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এই মহিলাটিকে (শাদী) দিলাম। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৭১৬)

১৪. ইহরাম পরা অবস্থায় বিয়ে করলেন নবী

জাবির ইবন যায়দ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবন আব্বাস আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ইহরাম অবস্থায় নবী (সাঃ) বিবাহ করেছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৭৪১)

১৫. নারীরা নবীর কাছে আসছেন তার সাথে বিয়ে বসতে

সাবিত আল বুনানী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস এর কাছে ছিলাম। তখন তার কাছে তার কন্যাও ছিলেন। আনাস বললেন, একজন মহিলা নবী (সাঃ) এর কাছে সমর্পণ করতে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? (অর্থাত্ আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?) এ কথা শুনে আনাস এর কন্যা বললেন, সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম, সে নবী (সাঃ) এর সাহচর্য পেতে আকৃষ্ট হয়েছিল। এ কারণেই সে নবী( সাঃ) এর কাছে নিজকে পেশ করেছে। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৭৪৫)

মন্তব্য : সম্ভবত অনুবাদে ভুল হয়ে থাকবে। কারণ ইংরেজি অনুবাদে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন কথা। (মহিলার কথা শুনে) আনাসের কন্যা বললেন, কী নিলজ্জ মহিলা! ছি! ছি! তখন আনাস বললেন, সে তোমার চেয়ে ভাল। কারণ সে নবীকে পছন্দ করে বিধায় নিজেকে নবীর কাছে উপস্থাপন করেছে বিয়ের জন্য। [Thereupon Anas’s daughter said, “What a shameless lady she was ! Shame! Shame!” Anas said, “She was better than you; she had a liking for the Prophet so she presented herself for marriage to him.]

১৬. নবী বললেন, এখন আমার নারীর প্রয়োজন নেই।

হযরত সাহল থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলা নবী (সাঃ) এর কাছে এলো এবং নিজকে শাদীর জন্য তার কাছে পেশ করল। তিনি বললেন, এখন আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। এরপর উপস্থিত একজন লোক বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাকে আমার সাথে শাদী দিন। নবী সাঃ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি আছে? লোকটি বলল, আমার কিছু নেই। নবী সাঃ) বললেন, তাকে একটা লোহার আংটি হলেও দাও। লোকটি বলল, আমার কাছে কিছুই নেই। নবী (সাঃ) বললেন, তোমার কাছে কি পরিমান কোরআন আছে? লোকটি বলল, এ পরিমাণ কোরআন শরীফ আছে। নবী (সাঃ) বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন শরীফ জান, তার বিনিময়ে এই মহিলাকে তোমার কর্তৃত্বে দিয়ে দিলাম। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৭৬৫) একই হাদিস ৪৭৫০, ৪৭৫৬, ৪৭৫৯, ৪৭৭২ ইত্যাদি।

১৭. নবী বিয়ে বাতিল করলেন

হযরত খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি বয়স্কা ছিলেন তখন তার পিতা তাকে শাদী দেন। এ শাদী তার পছন্দ ছিল না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে গেলে তিনি এ শাদী বাতিল করে দেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৭৬২)

মন্তব্য: এতো সহজেই বিয়ে বাতিল করতেন নবীজী (সাঃ)!

১৮. নবীর স্ত্রীর ওজন সমস্যা এবং প্রকৃতির ডাক

আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যান। সাওদা এমন মোটা শরীরের অধিকারিণী ছিলেন যে, পরিচিত লোকদের থেকে নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। উমর ইবন খাত্তাব তাকে দেখে বললেন, হে সাওদা! জেনে রাখ, আল্লাহর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারবে না। এখন দেখ তো, কেমন করে বাইরে যাবে? আয়েশা বলেন, (এ কথা শুনে) সাওদা ফিরে আসলেন। আর এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তার হাতে ছিল টুকরা হাড়। সাওদা ঘরে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন উমর আমাকে এমন এমন কথা বলেছেন। আয়েশা বলেন, এ সময় আল্লাহতা’আলা তার নিকট ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ শেষ হল, হাড় টুকরা তখনও তার হাতেই ছিল, তিনি তা রাখেননি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৪৩২)

১৯. সালাতের সময় মারামারির পরামর্শ দিয়েছেন নবী

আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, সালাত আদায়ের সময় তোমাদের কারো সম্মুখ দিয়ে যখন কেউ চলাচল করবে তখন সে তাকে অবশ্যই বাধা দিবে। সে যদি অমান্য করে তবে আবারো তাকে বাধা দিবে। এরপরও যদি সে অমান্য করে তবে অবশ্যই তার সাথে লড়াই করবে। কেননা সে শয়তান। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ৩০৪৫)

মন্তব্য: মসজিদুল হারামে যদি এরকমটা করতে যান তাহলে চিত্রটা কী দাড়াবে একবার কল্পনা করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top