নবীদের নিয়ে অবান্তর বর্ণনা

হযরত মোহাম্মদকে (সাঃ) অন্য নবীদের চেয়ে বড়ো করে দেখানোর জন্য বিস্তর হাদিস রচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য নবীদের হেয় করেও তৈরি হয়েছে বেশ কিছু হাদিস। কয়েকটি নমুনা:

১. মুসা (সাঃ) নগ্ন হয়ে দৌড়াচ্ছেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন: বনী ইসরাইলের লোকেরা রগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করত। কিন্তু মুসা (সাঃ) একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসলাইলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম, মুসা (সাঃ) কোষবৃদ্ধি রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মুসা (সাঃ) একটি পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মুসা (সাঃ) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পড়লেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবু হোরায়রা বলেন: আল্লাহর কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল। আবু হোরায়রা আরো বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: একসময় আইয়ূব (সাঃ) বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তার উপর সোনার পঙ্গপাল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ূব (সাঃ) তার কাপড়ে সেগুলি কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন তার রব তাকে বললেন: হে আইয়ূব! আমি কি তোমাকে এগুলি থেকে অমুখাপেক্ষি করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যা। আপনার ্যযতের কসম। অবশ্য করেছেন। তবে আপনার বরকত থেকে বেনিয়ায নই। এভাবে বর্ণনা করেছেন ইবরাহিম, আবু হোরায়রা থেকে যে, নবী (সাঃ) বলেছেন: একবার আইয়ূব (সাঃ) বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করেছিলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। প্রথম খণ্ড। হাদিস নং ২৭৫)

২. আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুসা (সাঃ) অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন, সব সময় শরীর আবৃত রাখতেন। তার দেহের কোন অংশ খোলা দেখা যেতনা তা থেকে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাইলের কিছু সংখ্যক লোক তাকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে এত বেশি ঢেকে রাখেন, তার একমাত্র কারণ হলো, তার শরীরে কোন দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ অথবা একশিরা বা অন্য কোন রোগ আছে। আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছ করলেন মুসা (সাঃ) সম্পর্কে তারা যে অপবাদ রটিয়েছে তা থেকে তাকে মুক্ত করবেন। এরপর একদিন নির্জন স্থানে গিয়ে তিনি একাকী হলেন এবং তার পরনের কাপড় খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন, তারপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যখনই তিনি কাপড় নেয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তার কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। এরপর মুসা (সাঃ) তার লাঠিটি হাতে নিয়ে পাথরটির পেছনে পেছনে ছুটলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড় হে পাথর! হে পাথর! পরিশেষে পাথরটি বনী ইসরাইলের একটি জনসমাবেশে গিয়ে পৌছল। তখন তারা মুসা (সাঃ) কে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখল যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এবং তারা তাকে যে অপবাদ দিয়েছিল সেসব দোষ থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। আর পাথরটি থামল, তখন মুসা (সাঃ) তার কাপড় পরিধান করলেন এবং তার হাতের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার কিংবা পাচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। আর এটিই হলো আল্লাহর এ বাণীর মর্ম: হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়োনা যারা মুসা (সাঃ) কে কষ্ট দিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা থেকে যা তারা রটনা করেছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। (৩৩:৬৯) (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড । হাদিস নং ৩১৬৫)

৩. সোলায়মান (সাঃ) এক রাতে ৭০/৯০ স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন এবং জন্ম দিয়েছিলেন অর্ধমানবের (আস্তাগফিরুল্লাহ)

আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, সুলায়মান ইবন দাউদ বলেছিলেন, আজ রাতে আমি আমার সত্তর জন স্ত্রীর নিকট যাব। প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে অশ্বারোহী যোদ্ধা গর্ভধারণ করবে। এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তার সাথী বললেন, ইনশা আল্লাহ (বলুন)। কিন্তু তিনি মুখে তা বলেননি। এরপর একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ গর্ভধারণ করলেন না। সে যাও এক (পুত্র) সন্তান প্রসব করলেন। তাও তার এক অঙ্গ ছিল না। নবী (সাঃ) বললেন, তিনি যদি ‘ইনশা আল্লাহ’ মুখে বলতেন, তা হলে (সবগুলো সন্তানই জন্ম নিত এবং) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতো। শুয়ায়ব এবং ইবন আবু যিনাদ এখানে নব্বই জন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন আর এটাই সঠিক বর্ণনা। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩১৮৪)

৪. মুসা (সাঃ) মৃত্যুর ফেরেশতাকে চড় মেরেছেন
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মওতের ফিরিশতাকে মুসা (সাঃ) এর নিকট তার (জান কবযের) জন্য পাঠান হয়েছিল। ফিরিশতা যখন তার নিকট আসলেন তিনি তার চোখে থাপপর মারলেন। তখন ফিরিশতা তার রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে বল সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম ঢাকবে তার প্রতিটি পশমের পরিবর্তে তাকে এক বছর করে হায়াত দেওয়া হবে। মুসা (সাঃ) বললেন, হে রব! তারপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যু। মুসা (সাঃ) বললেন, তাহলে এখনই হউক (রাবী আবু হোরায়রা বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাকে যেন ‘আরদে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র ভূমি থেকে একটি পাথর নিক্ষেপের দুরত্বের সমান স্থানে পৌছে দেওয়া হয়। আবু হোরায়রা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,, আমি যদি সেখানে থাকতা তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রাস্তার পার্শ্বের লাল টিলার নিচে তার কবরটি দেখিয়ে দিতাম। রাবী আব্দুর রাযযাক বলেন, মামার … আবু হোরায়রা সূত্রে নবী থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩১৬৮)

মন্তব্য: আল্লাহর আদেশ ব্যতীত মৃত্যুর ফেরেশতা জান কবজ করতে আসেন না। তাহলে কারো পক্ষে কিভাবে তাকে তাড়িয়ে দেয়া সম্ভব। মরণশীল মানুষ কিভাবে অশরীরী ফেরেশতাকে চড় মারতে পারে? একজন নবীর ইচ্ছা কি আল্লাহর ইচ্ছার চেয়েও বড়? (আস্তাগফিরুল্লাহ)

এর সঙ্গে কোরআনের আয়াতটি মিলিয়ে দেখুন:
৬:৬১ তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তাহার মৃত্যু ঘটায় এবং তাহারা কোন ক্রটি করে না।

৫.ইব্রাহিম (সাঃ) মিথ্যা বলেছিলেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)

ক. আবু হোরায়ারা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন নবী (সাঃ) এর সামনে কিছু গোশত আনা হল। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একই সমতল ময়দানে সমবেত করবেন। তখন আহ্বানকারী তাদের সকলকে তার আহ্বান সমভাবে শুনাতে পারবে। এবং তাদের সকলের উপর সমভাবে দর্শকের দৃষ্টি পড়বে আর সূর্য তাদের অতি নিকটবর্তী হবে। তারপর তিনি শাফায়াতের হাদিস বর্ণনা করলেন যে, সকল মানুষ ইবরাহিম (সাঃ) এর নিকট আসবে এবং বলবে, পৃথিবীতে আপনি আপনি আল্লাহর নবী এবং তার খলীল। অতএব আমাদের জন্য আপনি আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন। তখন তিনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা উক্তির কথা স্মরণ করে বলবেন, নাফসী! নাফসী! তোমরা মুসার কাছে যাও। অনুরুপ হাদীস আনাসও নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩১২৩)

খ. ইব্রাহিম (সাঃ) তিনটি মিথ্যা বলেছেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, ইব্রাহিম (সাঃ) তিনবার ব্যতীত কোন মিথ্যা বলেননি। অত্যাচারী বাদশাহর দেশে তাকে যেতে হয়েছিল এবং তার সাথে সারা ছিলেন। এরপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (সেই বাদশাহ) হাজেরাকে তার সেবার জন্য তাকে দান করেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আল্লাহ কাফের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং আমার খেদমতে আজেরা (হাজেরা) কে দিয়েছেন। আবু হোরায়রা বলেন, হে আকাশের পানির সন্তানগণ (কুরাইশ)! এ হাজেরাই তোমাদের মা।” (বুখারি শরিফ। ইফা। অষ্টম খণ্ড। হাদিস নং ৪৭১৩)

৬. নবীদের মধ্যে পার্থক্য করা

আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মুসলিম আর একজন ইয়াহুদী পরষ্পরকে গালি দিল। মুসলিম ব্যক্তি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ (সাঃ) কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। কসম করার সময় তিনি একথাটি বলেছেন। তখন ইয়াহুদী লোকটিও বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি মুসা (সাঃ) কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। তখন সেই মুসলিম সাহাবী সে সময় তার হাত উঠিয়ে ইয়াহুদী লোকটিকে একটি চড় মারলেন। তখন সে ইয়াহুদী নবী (সাঃ) এর নিকটে গেল এবং ঐ ঘটনাটি অবহিত করল যা তার ও মুসলিম সাহাবীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা আমাকে মুসা (সাঃ) এর উপর অধিক মর্যাদা দেখাতে যেওনা (কেননা কিয়ামতের দিন) সকল মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। আর আমিই সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাব। তখনই আমি মুসা (সাঃ) কে দেখব, তিনি আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, যারা বেহুশ হয়েছিল, তিনিও কি তাদের মধ্যে ছিলেন? তারপর আমার আগে হুশ এসেছে? অথবা তিনি তাদেরই একজন, যাদেরকে আল্লাহ বেহুশ হওয়া থেকে বাদ দিয়েছিলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩১৬৯)

লক্ষণীয় কোরআনের আয়াত : নবীদের মধ্যে কোন পার্থক্য না করার নির্দেশ (২:২৮৫ ইত্যাদি)

৭. বনী ইসরাইল ও হাওয়ার উপর দোষারোপ
আবু হোরায়রা সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। অর্থাত্ নবী (সাঃ) বলেছেন, নবী ইসরাইল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধযুক্ত হতো না। আর যদি হাওয়া না হতেন তবে কোন নারীই তার স্বামীর খেয়ানত করত না। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩০৯৫)

৮. ঝগড়া করছেন আদম ও মুসা (সাঃ)

আবু হোরায়রা সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আদম ও মুসা (সাঃ) (পরষ্পরে) কথা কাটাকাটি করেন। মুসা (সাঃ) বলেন, হে আদম, আপনি তো আমাদের পিতা। আপনি আমাদের বঞ্চিত করেছেন এবং আমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করেছেন। আদম মুসা (সাঃ) কে বললেন, হে মুসা! আপনাকে তো আল্লাহতা’আলা স্বীয় কালামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং আপনার জন্য স্বীয় হাত দ্বারা লিখেছেন। অতএব আপনি কি আমাকে এমন একটি ব্যাপার নিয়ে তিরস্কার করছেন? যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বেই আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। তখন আদম মুসা (সাঃ) এর বিতর্কে জয়ী হলেন। উক্ত কথাটি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তিনবার বলেছেন। সুফিয়ানও আবু হোরায়রা সূত্রে নবী করীম (সাঃ) থেকে এরুপ বর্ণনা করেছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। দশম খণ্ড। হাদিস নং ৬১৬১)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top