নবীজী (সাঃ) কি জীবিত?

উম্মতের ভালোবাসায় তিনি অমর, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবে তো তিনি প্রয়াত অনেক আগেই। তবু, মুসলমানদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, নবীজী এখনো তার কবরে জিন্দা আছেন। এবং তার প্রতি পাঠানো দরুদ তিনি শুনতে পান। জগতের যেখানে যা হচ্ছে তা সব দেখতে পান, এরকমও মনে করেন অনেক ভক্ত। বিশ্ব সৃষ্টির আগেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মিলাদে তার সম্মানে বিশেষভাবে সজ্জিত শুন্য আসনও রাখা হয়। মিলাদে তার প্রতি এমনভাবে সালাম পাঠানো হয় যেন তিনি তা শুনতে পাচ্ছেন।

অনেকে এও বিশ্বাস করেন, নবীজী (সাঃ) গায়েবের অনেক কিছু জানতেন, কোরানে বর্ণিত সব ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, কোরআনের বিবরণের বাইরেও অনেক কিছু দেখতে পেতেন। কাছের সাহাবীদের সেসবের খবর তিনি বলে গেছেন। অনেকে মনে করেন নবীজী আদতে মারা যাননি।

এ বিশ্বাসের মূলে আছে কিছু হাদিস। বিচ্ছিন্নভাবে কোরআনের কিছু আয়াতের হাদিসভিত্তিক ব্যাখ্যাও করা হয় এর সমর্থনে।
কোরআনের যে আয়াতগুলি ব্যবহৃত হয় তার একটি –

হে নবী আমি তো তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরুপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে।’

কিন্তু এ প্রসঙ্গে কোরানের ব্যাখ্যা কী?

১.
প্রথমে ৪ নম্বর সুরার ৪১ নম্বর আয়াতটি দেখা যাক। এ আয়াতটি শুধু মুহাম্মদকে লক্ষ্য করে নাজিল হয়নি। জগতের সব নবী ও রসুলই তার উম্মতের সাক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন- যারা ইমান এনেছিল কিংবা যারা আনেনি উভয়েরই। এক্ষেত্রে অন্য নবীদের থেকে শেষ নবীকে আলাদা করার কোন কারণ নেই।

৪:৪১ যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী হাজির করব এবং তোমাকে এই উম্মতদের সাক্ষীরুপে হাজির করব তখন কেমন হবে?’

২.
নবীজী (সাঃ) অতীতের ঘটনাবলী প্রতক্ষ্য করেননি।

১২:১০২ এটা গায়েবের খবর যা আমি তোমাকে জানাচ্ছি। ওরা যখন ষড়যন্ত্র করছিল তখন তুমি সেখানে ছিলে না।’

২৮:৪৪ মুসাকে যখন আমি বিধান দিয়েছিলাম তখন তুমি পশ্চিমপ্রানে্ত ছিলে না, তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।’

২৮:৪৫ তুমি তো মাদিয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে না, ওদের কাছে আমার আয়াত আবৃত্তি করার জন্য।’

একইভাবে তার হাজির না থাকার কথা বলা হয়েছে ২৮: ৪৬, ৩:৪৪ ইত্যাদি আয়াতে।

৩.

সাধারণ মানুষের মতো তিনিও মরণশীল

৩৯:৩০ নিশ্চয়ই তুমি মারা যাবে এবং নিশ্চয়ই তারা মারা যাবে।’

৩:১৪৪ মুহাম্মদ একজন রসুলমাত্র। তার আগে অনেক রসুল গত হয়েছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় বা নিহত হয় তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে?’

৬:৫০ বল, Èআমি তোমাদের বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার আছে, অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি অবগত নই। এবং তোমাদের এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমার প্রতি যাহা ওহী হয় আমি শুধু তাহারই অনুসরণ করি।’

৭:১৮৮ বলো, Èআল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ছাড়া আমার নিজের ভালো মন্দের উপরও আমার কোন ক্ষমতা নাই। আমি যদি অদৃশ্যের খরবরই জানতাম তাহলে তো নিজেরই অনেক কল্যান করে নিতাম আর কোন অকল্যানই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। আমি তো শুধু মুমিনদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আর কিছু নই।’

একই কথা প্রযোজ্য অন্য নবীদের বেলায়ও। যেমন তার মৃতু্যর পরে নবী ঈসা (সাঃ) জানেন না জগত্সংসারের খবর।

৫:১১৭ তুমি আমাকে যে আদেশ করেছো তার বাইরে আমি তাদের কিছু বলিনি। আর তা এই: তোমার আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর এবাদত করো, এবং যতদিন আমি তাহাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাহাদের কার্যকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সব বিষয়ে সাক্ষী।

এসব কোরানের আয়াত বিবেচনা করলে মনে প্রশ্ন জাগে, নবীজীকে হাজির-নাজির মেনে আমরা যে আচরণ করি মিলাদের দরুদ, দোয়ায় কিংবা নামাজের তাশাহুদে, তার কোন মানে আছে কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top