হাদিসসহ ইসলামের সেকেন্ডারি সেকেন্ডারি সোর্সগুলো যদি পড়েন তাহলে ধর্ম পালনের হাজারো রীতিনীতির বিশাল ভাণ্ডার আপনার সামনে উন্মোচিত হবে যার মধ্যে আছে স্ববিরোধিতা, অস্পষ্টতা, অসংলগ্নতা। এসব জটিল জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে হাজার হাজার পৃষ্ঠার আইনকানুনের পুস্তকাদি। এসবের ব্যাখ্যা করে তৈরি হয়েছে আলেম-সমাজ, হুজুর সমাজ যারা সামান্য সরল বিষয়কে, সহজ নির্দেশকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে এমন জটিল করে তোলেন যে পড়ে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়াই মুশকিল হয়। এইসব জটিলতার কথা মাথায় রেখেই কোরআনে সুরা বাক্বারায় একটি ছোট্ট ঘটনার মাধ্যমে যে শিক্ষা আল্লাহ দিতে চেয়েছেন তা আমাদের বিশেষ কাজে লেগেছে বলে মনে হয় না।
২:৬৭. স্মরণ কর, যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, আল্লাহ তোমাদিগকে একটি গরু যবেহ-এর আদেশ দিয়াছেন, তাহারা বলিয়াছিল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করিতেছ? মূসা বলিল, আল্লাহর স্মরণ লইতেছি যাহাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত না হই।
২:৬৮. তাহারা বলিল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহা কিরুপ? মূসা বলিল, আল্লাহ বলিতেছেন, উহা এমন গরু যাহা বৃদ্ধও নহে, অল্পবয়স্কও নহে- মাঝবয়সী। সুতরাং তোমরা যাহা আদিষ্ট হইয়াছ তাহা কর।
২:৬৯. তাহারা বলিল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহার রং কি? মূসা বলিল, আল্লাহ বলিতেছেন, উহা হলুদ বর্ণের গরু, উহার রং উজ্জল গাঢ়, যাহা দর্শকদিগকে আনন্দ দেয়।
২:৭০ তাহারা বলিল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহা কোনটি? আমরা গরুটি সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হইয়াছি এবং আল্লাহ ইচ্ছা করিলে নিশ্চয় আমরা দিশা পাইব।
২:৭১. মূসা বলিল, তিনি বলিতেছেন, উহা এমন এক গরু যাহা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহূত হয় নাই- সুস্থ নিখুঁত। তাহারা বলিল, এখন তুমি সত্য আনিয়াছ। যদিও তাহারা যবেহ করিতে উদ্যত ছিল না তবুও তাহারা উহাকে যবেহ করিল।
এই ঘটনার মধ্যে যে অসাধারণ প্রজ্ঞা বিতরণ করা হয়েছে তার ধার কাছে দিয়েও চলতে রাজী নয় মুসলিম সমাজ। আল্লাহ কোরআনে সরাসরি যে সব স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলির আরো সুক্ষ এবং সুক্ষতর, বিস্তৃত বিবরণ না পেলে যেন তার মন ভরছে না, তার ইবাদত সম্পূর্ণ হচ্ছে না।
প্রশ্ন করাকে কোরআন শরিফে উৎসাহিত করলেও খামাকা প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
৫:১০১ হে মুমিনগণ! তোমরা সেইসব বিষয়ে প্রশ্ন করিও না যাহা তোমাদের নিকট প্রকাশ হইলে তাহা তোমাদিগকে কষ্ট দিবে। কুরআন অবতরণের কালে তোমরা যদি সেইসব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে উহা তোমাদের নিকট পেশ করা হইবে। আল্লাহ সেই সব ক্ষমা করিয়াছেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।
এসব অহেতুক প্রশ্ন, সুক্ষ ও বিস্তৃত বিবরণ মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুতই করে না, ক্ষেত্র বিশেষে আদেশ পালনকে কঠিন করে তোলে। অথচ মধ্যপন্থা অবলম্বন করে চললেই কাজ সহজ হয়ে যেতো। কোরআনে তো আল্লাহ বলেছেনই যে বান্দাকে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যেতে।
৬৪:১৬ তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর, এবং শোন, আনুগত্য কর ও ব্যয় কর তোমাদের নিজেদেরই কল্যানের জন্য; যাহারা অন্তরের কার্পণ্য হইতে মুক্ত, তাহারাই সফলকাম।
আল্লাহ চান আমাদের কাজকে, সাধ্যের মধ্যে রাখতে, সহজ করে দিতে- এই কথা কোরআনে বহুবার বলা হয়েছে (৪:২৮ ইত্যাদি)। কিন্তু আয়াতের জটিল জটিল ব্যাখ্যা করে আমরা আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে নিই।
কী আশ্চর্য মানুষের গতিক!