কোরআন ধরতে বা পড়তে কি ওজু লাগে?

ওজু করে কোরআন পড়ায় কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু কোরআন ধরার বা পড়ার ক্ষেত্রে ওজুর কোন নির্দেশনা কোরআনে নেই।

দুটি বিষয় বিশেষভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রথমত,
৫:৬ ও ৪:৪৩ আয়াতে ওজুর কথা বলা হয়েছে নামাজের প্রসঙ্গে।

অন্য অনেক আয়াতে কোরআন পড়ার কথা আছে। কিন্তু কোথাও কোরআন পাঠের শর্ত হিসেবে ওজুর কথা বলা হয়নি।

কোরআনকে দেয়া হয়েছে মূলত একটা গাইড বই হিসেবে ব্যবহার করার জন্য, শুধুমাত্র সুর করে তেলাওয়াতের জন্য নয় কিংবা কাপড়ে মুড়ে রেহালে করে তাকে তুলে রাখার জন্যও নয়। এই বইটি নিত্য ব্যবহার্য, সবসময়ের সঙ্গী। ওজু করে ধরতে বা পড়তে গেলে এর ব্যবহার নিয়নি্ত্রত হয়ে পড়ে।

আমাদের উচিত এটিকে সবসময়ের সঙ্গী করা এবং প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা। ইন ফ্যাক্ট আজকাল মোবাইলে বা ল্যাপটপে অ্যাপসের মাধ্যমে ডাউনলোড করা কোরআন অনেক তরুনেরই সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এবং এই মোবাইল ওজুবিহীন অবস্থাতেও আমরা ব্যবহার করে থাকি।

দ্বিতীয়ত,
কোরআন গ্রন্থটিকে পূজা না করে এর অন্তর্নিহিত বাণীর চর্চাই জরুরী। কোরআনে সুরা আরাফে বর্ণিত ঘটনাটি লক্ষ্য করুন যেখানে তাওরাত নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফেরার পর মুসা (সাঃ) এর উত্তেজনার চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে।
তাওরাত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলছেন,

৭:১৪৫ আমি তাহার জন্য ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের ষ্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখিয়া দিয়াছি।

এরপর ১৫০ আয়াতটিতে লক্ষ্য করুন, নিজ সম্প্রদায়ের কাছে এসে মুসা (সাঃ) যখন দেখলেন তার লোকজন বাছুর মূর্তি বানিয়ে পূজা শুরু করেছে, তিনি প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হলেন এবং..

৭:১৫০…এবং সে ফলকগুলি ফেলিয়া দিল আর স্বীয় ভ্রাতাকে চুলে ধরিয়া নিজের দিকে টানিয়া আনিল।

মুসা (সাঃ) এর ধারণা হয়েছিল, তার ভাই হারুন (সাঃ) এর গাফিলতির জন্যই এটা হয়েছে। কিন্তু হারুন (সাঃ) যখন তার ভাইয়ের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন তখন তার ক্রোধ প্রশমিত হল।

৭:১৫৪ মুসার ক্রোধ যখন প্রশমিত হইল তখন সে ফলকগুলি তুলিয়া লইল। যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাহাদের জন্য উহাতে যাহা লিখিত ছিল তাহাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত।

লক্ষ্য করুন, এখানে তাওরাতের খন্ডগুলিকে ছুড়ে ফেলছেন হযরত মুসা (সাঃ), একজন নবী, ক্রোধের বশবর্তী হয়ে। পরে উত্তেজনা প্রশমিত হলে সেগুলিকে আবার কুড়িয়ে নিচ্ছেন। এবং এই ছুড়ে ফেলার জন্য তার তরফে কোন অনুশোচনা নেই, আল্লাহর পক্ষ থেকেও কোন ভর্ত্সনা নেই।

কারণ নবী জানেন, ধর্মগ্রন্থ নয়, ধর্মের বাণীর চর্চাই জরুরী।
ওজু করে কোরান ধরা বা পড়ার কারণ হিসেবে অনেকে নিচের আয়াতটি উলে্লখ করেন।

৫৬:৭৭-৭৯ নিশ্চয়ই ইহা সম্মানিত কোরআন। যাহা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। যাহারা পূতপবিত্র তাহারা ছাড়া অন্য কেহ ইহা স্পর্শ করে না।

যে কোন পাঠক পড়লেই বুঝবেন, এ আয়াতটি কোন নিদের্শ বা নির্দেশনা নয় বরং সাদামাটা একটি বিবৃতি।

কোরআনে বহুবার বলা হয়েছে, কোরানের ওহী এসেছে মৌখিক আখ্যান (oral narrative) হিসেবে। কিতাব আকারে পড়ে এটি গ্রন্থিত হয়েছে। (৮০:১৩-১৬)

উম্মুল কিতাবের যে বর্ণনা আছে সেটিকে মাস্টার সোর্স হিসেবে উলে্লখ করা হয়েছে। এটি সব কিতাবের মূল উত্স, যা আল্লাহর অধিকারভুক্ত। (১৩:৩৯, ৪৩:২-৪)। একে লওহে মাহফুজ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে।

১৩:৩৯… এবং তঁাহারই (আল্লাহর) নিকট আছে উম্মুল কিতাব।

৮৫:২১-২২ বস্তুত ইহা সম্মানিত কোরআন। সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।

এই আয়াতগুলি পড়লে পরিষ্কার বোঝা যায়, একটি মাস্টারসোর্স আছে, যেটি সুরক্ষিত, যেটিকে বিকৃত বা করাপ্ট করা সম্ভব নয়।

এক্ষণে পুনরপি ৫৬:৭৭-৭৯ আয়াতটি পড়লে এটা বোঝা খুব কঠিন নয় যে, এখানে সুরক্ষিত কিতাব বলতে কোরআনকে বোঝানো হয়নি। বরং বোঝানো হয়েছে উম্মুল কিতাব বা লওহে মাহফুজকে। এই কিতাবের নিকটবর্তী হতে পারেন যারা বিশুদ্ধ। যেমন জিবরিল (সাঃ) যিনি এর বাণী নিয়ে এসেছেন নবী রাসুলদের কাছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top