দোয়া কবুলের জন্য মুসলিমরা একটি শব্দ উচ্চারণ করেন, সেটি হলো “আমিন”।
সালাতে ইমাম সুরা ফাতিহা পাঠের শেষে নামাজিরা নিরবে বা সশব্দে “আমিন” বলে ওঠেন। আমাদের শৈশবের জামাতের নামাজে এরকম জোরে সশব্দে আমিন বলার রেওয়াজ ছিল বলে মনে পড়ে না। কোরআন শরিফে ফাতিহার শেষে এরকম কোন শব্দ নেই। এমনকি কোরআন শরিফের কোথাও দোয়া কবুলের জন্য আমিন পড়ার কোন নির্দেশনা নেই। এটি এসেছে মূলত বাইবেল থেকে।
কোরআনে দোয়া কবুলের মন্ত্রও আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন সুরায়। যেমন:
১৪:৪০ … রাব্বানা ওয়া তাক্বাব্বাল দুয়া (অর্থ- হে আমাদের রব, আর আমাদের দোয়া কবুল করুন)
কোন কাজকে কবুল করার দোয়া:
২:১২৭ …রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাছ ছামিউল আলিম (হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।)
তাহলে আমরা “আমিন” বলি কেন? কারণ হাদিস।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ইমাম “গাইরিল মাগদুবে আলাইহিম ওয়ালাদদ্বোল্লিন” পড়লে তোমরা আমীন বলো। কেননা যার এ (আমীন) বলা ফেরেশতাদের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। [বুখারি শরিফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা ১২১-১২২, হাদিস নং ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৪৬।]
[সস্তায় জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফের অসংখ্য তরিকা আছে হাদিসের কেতাবগুলিতে, এটিও তার একটি।]
আমিন এর সহজ অর্থ কবুল, তবে তাই হোক, নিশ্চয়ই বা সত্যই ইত্যাদি। কোন বক্তব্যকে সত্য বলে ঘোষণার ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাইবেলে এর বিস্তর ব্যবহার রয়েছে। বাইবেলের কিং জেমস ভার্সনের ওল্ড টেস্টামেন্টের ডিউটারোনমি অধ্যায়ে থেকে কয়েকটি উদাহরণ:
Deuteronomy 27:17 “Cursed be he that removeth his neighbour’s landmark. And all the people shall say, Amen.”
Deuteronomy 27:18 “Cursed be he that maketh the blind to wander out of the way. And all the people shall say, Amen.”
Deuteronomy 27:19
“Cursed be he that perverteth the judgment of the stranger, fatherless, and widow. And all the people shall say, Amen.”
বাইবেলের এসব উদাহরণে যে আমেন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ সর্বজনবিদিত- কবুল, তবে তাই হোক, নিশ্চয়ই ইত্যাদি।
নিউ টেস্টামেন্টেও একই অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে-
Matthew 6:13 “And lead us not into temptation, but deliver us from evil: For thine is the kingdom, and the power, and the glory, for ever. Amen”
শব্দটি যে হিব্রু বাইবেল থেকেই এসেছে সেটি এর ইটিমোলজিকাল সূত্রগুলোও সমর্থন করে। অনলাইন ইটিমোলজিক্যাল ডিকশনারিতে গেলেই বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারবেন-
amen(interj.)
Old English, from Late Latin amen, from Ecclesiastical Greek amen, from Hebrew amen “truth,” used adverbially as an expression of agreement (as in Deuteronomy xxvii.26, I Kings i.36), from Semitic root a-m-n “to be trustworthy, confirm, support.”
Compare similar use of Modern English certainly, absolutely. Used in Old English only at the end of Gospels, otherwise translated as Soðlic! or Swa hit ys, or Sy! As an expression of concurrence after prayers, it is recorded from early 13c. Amen corner is attested from 1860.
কাজেই, কোরআনে “আমিন” শব্দটি না থাকলেও হিব্রু বাইবেলে এর ব্যবহার আমরা পেয়েছি যা একই অর্থ বহন করে। তবে, বাইবেলে আছে বলেই যে এটি ব্যবহার করা যাবে না তা নয়।
সালাতে কী পড়া যাবে এবং কী পড়া যাবে না তার ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। কোরআনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ যে কোন প্রার্থনাই ব্যক্তিগত সালাতে করা যায়। কোরআন থেকে কিংবা কোরআনের বাইরের উত্তম প্রার্থনাও গ্রহণযোগ্য। ফলে “আমিন” বলায় হয়তো কোন অপরাধ নেই। কিন্তু যেহেতু কোরআনে দোয়া কবুলের জন্য সুনির্দিষ্ট আয়াত রয়েছে, সেহেতু, সেটি দিয়ে দোয়া কবুলের প্রার্থনা করাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।