হাদিসের বইগুলোর বিস্তর অসংগতির মধ্যে অন্যতম এর মধ্যে বর্ণিত আজগুবি ধরনের হাদিসগুলো। সাধারণ পাঠক এসব হাদিস পড়ে এসবের অর্থ বুঝতে পারেন না। হুজুররা অবশ্য নানারকম ব্যাখ্যা দিতে থাকেন।
যে শয়তান আগুনের তৈরি তাতে নরাত্বোরপ করে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে এসবের মধ্যে যা রীতিমতো হাস্যকর।
কয়েকটি আজগুবী হাদিসের নমুনা দেয়া হলো। আরো আছে।
১. আযানের সময় শয়তান বায়ূত্যাগ করে পালায়
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: সালাতের আযান হলে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে সে আযান শুনতে না পায়। তখন তার পশ্চাদবায়ূ নিঃসরণ হতে থাকে। মুআযযিন আযান শেষে নিরব হলে সে আবার এগিয়ে আসে। আবার ইকামত বলা হলে পালিয়ে যায়। মুআযযিন (ইকামত) শেষ করলে সে এগিয়ে আসে। তখন সে মুসল্লিকে বলতে থাকে, (ওটা) স্মরণ কর, যে বিষয় তার স্মরণে ছিল না শেষ পর্যন্ত সে কত রাকাআত সালাত আদায় করল তা মনে করতে পারে না। আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেছেন, তোমাদের কেউ এরুপ অবস্থায় পড়লে (শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় যেন দুটি সিজদা করে। একথা আবু সালামা আবু হোরায়রা থেকে শুনেছেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। দ্বিতীয় খণ্ড। হাদিস নং ১১৪৯)
২. কানে প্রসাব করে শয়তান
আবুদল্লাহ (ইবনে মাসউদ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এর সামনে এক ব্যক্তির সম্পর্কে আলোচনা করা হল- সকাল বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, সালাতের জন্য (যথাসময়ে) জাগ্রত হয়নি, তখন নবী (সাঃ) ইরশাদ করলেনঃ শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে। (বুখারি শরিফ। ইফা। দ্বিতীয় খণ্ড। হাদিস নং ১০৭৮)
৩. শয়তান মাথার পিছনে গিট দেয়
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,‘ তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শয়তান তার মাথার শেষাংশে তিনটি করে গিরা দিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিরার সময় এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনো অধিক রাত রয়ে গেছে, অতএব শুয়ে থাক। এরপর সে লোক যদি জেগে উঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। (অলসতা দূর হয়) তারপর যদি সে উযু করে, তবে দ্বিতীয় গিরাও খুলে যায় (এটা অপবিত্রতার গিরা)। আর যদি সে সালাত আদায় করে তবে সব কটি গিরাই খুলে যায়। আর এ ব্যক্তি খুশীর সাথে পবিত্র মনে ভোর উদযাপন করবে, অন্যথায় সে অপবিত্র মনে অলসতার সাথে ভোর উদযাপন করবে। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ৩০৪১)
৪. শয়তান নাকের ছিদ্রে রাত যাপন করে
আবু হোরায়রা সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা থেকে উঠল এবং উযূ করল তখন তার নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা উচিত। কেননা, শয়তার তার নাকের ছিত্রে রাত যাপন করেছে। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩০৬৫)
৫. হাই তোলার সময় শয়তান হাসে
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ বলেছেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব তা দমন করবে। কেননা তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন ‘হা’ বলে, তখন শয়তান হাসতে থাকে। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩০৫৯)
৬. খেজুর গাছের খুটির কান্না
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মসজিদে নববীতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুটি ছিল যার সাথে হেলান দিয়ে নবী করীম (সাঃ) দাড়াতেন। এরপর যখন তার জন্য মিম্বর স্থাপন করা হল, আমরা তখন খুটি থেকে দশ মাসের গর্ভবতী উটনীর ক্রন্দন করার মতো শব্দ শুনতে পেলাম। এমনকি নবী করীম (সাঃ) মিম্বর থেকে নেমে এসে খুটির উপর হাত রাখলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। দ্বিতীয় খণ্ড। হাদিস নং ৮৭২)
৭. জুরাইযের মোজেজা
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ এক মহিলা তার ছেলেকে ডাকল। তখন তার ছেলে গীর্জায় ছিল। বলল, হে জুরাইজ! ছেলে মনে মনে বলল, ইয়া আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা (এর ডাক) আর (অপরদিকে) আমার সালাত! মা আবার ডাকলেন, হে জুরাইজ! ছেলে বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার মা আর আমার সালাত! মা আবার ডাকলেন, হে জুরাইজ! ছেলে বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার মা ও আমার সালাত! মা (বিরক্ত হয়ে) বললেন, ইয়া আল্লাহ! পতিতাদের সামনে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত যেন জুরাইজের মুত্যু না হয়। এক রাখালিনী যে বকরী চরাতো, সে জুরাইজের গীর্জায় আসা যাওয়া করত। সে একটি সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল- এ সন্তান কার ঔরসজাত? সে জবাব দিল, জুরাইজের ঔরসের। জুরইজ তার গীর্জা থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করল, কোথায় সে মেয়েটি, যে বলে যে, তার সন্তানটি আমার? (সন্তানসহ মেয়েটিকে উপস্থিত করা হলে, নিজে নির্দোষ প্রমাণের উদ্দেশ্যে শিশুটিকে লক্ষ্য করে) জুরাইজ বলেন, হে বাবুস! তোমার পিতা কে? সে বলল, বকরীর অমুক রাখাল। (বুখারি শরিফ। ইফা। দ্বিতীয় খণ্ড। হাদিস নং ১১৩৩) (আরও দেখুন চতুর্থ খণ্ড। হাদিস নং ২৩২০)।
মন্তব্য : জুরাইজের নির্দেশে একটি শিশু কথা বলল। এবং শিশুটি জানত তার মা কার সাথে (রাখাল) শুয়েছিল। জুরাইজকে এহেন মোজেজা দেখানোর মর্যাদা ও শক্তি কেন দেওয়া হলো? হাদিসের বইগুলোতে ইবনে জুরাইজের বরাতে হাদিস আছে। সে একজন সাবন্যারেটরও, অর্থাত্ তার বরাতে অন্যরাও হাদিস বর্ণনা করেছেন। দেখুন বুখারি শরিফ প্রথম খণ্ড হাদিস নং ১৬৭। ২য় খণ্ড ৭৬৮ ইত্যাদি।
৮. কবর থেকে বের করে থুথু দিয়ে নিজের জামা পরালেন নবী
জাবির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে দাফন করার পর নবী (সাঃ) তার (কবরের) কাছে এলেন এবং তাকে বের করলেন। তারপর তার উপর থুথু দিলেন, আর নিজের জামাটি তাকে পরিয়ে দিলেন। (বুখারি শরিফ। ইফা। দ্বিতীয় খণ্ড। হাদিস নং ১১৯৬)
৯. যার স্খলন আগে হয় সন্তান তার মতো হয়
আনাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালামের কাছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মদীনায় আগমণের খবর পৌছল, তখন তিনি তার কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চাই যার উত্তর নবী ছাড়া আর কেউ অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এইমাত্র জিবরাইল আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহ বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তবে সন্তান তার সদৃশ হবে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি – নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইয়াহুদীরা অপবাদ ও কুত্সা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুত্সা রটনা করবে। তারপর ইয়াহুদীরা এলো এবং আবদুল্লাহ ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করে, এতো তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন। এমন সময় আবদুল্লাহ তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল। তখন তারা বলতে লাগল যে, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তারা গীবত ও কুত্সা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩০৯৪)
মন্তব্য: এই হাদিসের মূল উত্স সম্ভবত ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ। (দেখুন আলফ্রেড গিয়ামের দি লাইফ অফ মোহাম্মদ, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ২৫৫)
১০. ইহুদীরা ইদুর
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, বনী ইসরাঈলের একদল লোক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। কেউ জানে না তাদের কি হলো আর আমি তাদেরকে ইদুর বলেই মনে করি। কেননা তাদের সামনে যখন উটের দুধ রাখা হয়, তারা তা পান করে না, আর তাদের সামনে ছাগলের দুধ রাখা হয় তারা তা পান করে। (আবু হোরায়রা বলেন) আমি এই হাদিসটি কাবের নিকট বললাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন? আপনি কি এটা নবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যা। তারপর তিনি কয়েকবার আমাকে একথাটি জিজ্ঞেস করলেন। তখন আমি বললাম, আমি কি তাওরাত কিতাব পড়েছি? (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ৩০৭৩)
১১. জ্বরের উত্পত্তি জাহান্নাম থেকে
আয়িশা থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, জ্বরের উত্পত্তি জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুতরাং তোমরা তা পানি দ্বারা ঠান্ডা কর। (বুখারি শরিফ। ইফা। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নং ৩০৩৫)
১২. জেনা করার জন্য বাদরের রজম!
আমর ইবন মাইমুস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে দেখেছি, একটি বানর ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারনে অনেকগুলো বানর একত্রিত হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করল। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম। (বুখারি শরিফ। ইফা। ষষ্ঠ খণ্ড। হাদিস নং ৩৫৭০)